সরকারের ৫ দফা নির্দেশনা জারি

সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় দেশের সব স্কুল, কলেজ সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে গতকাল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে আলাদা ঘোষণা দিতে শুরু করেছে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সরকার নতুন করে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে সরকার বিধিনিষেধ দিলেও মানুষ তা মানছে না। এখন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। সে কারণেই আবারো স্কুল বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুই সপ্তাহ পর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকবে।

এদিকে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটছে। এটি আগে ছিল না। এটা আমলে নিতে হয়েছে। মাঠের চিত্রের ওপর ভিত্তি করেই বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এর আগে তিনি বলেছিলেন জীবন যতখানি স্বাভাবিক রেখে করোনাকে মোকাবেলা করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে হাসপাতাল পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় তার। সে সময় তিনি জানতে পারেন, এবার শিশুরাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সংক্রমিত হচ্ছে। এমনটি আগে দেখা যায়নি। ফলে বিষয়টি আমলে নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, সংক্রমণ হঠাৎ করে বেশি বেড়ে গেছে। এজন্য শঙ্কা আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে যেন সেই শঙ্কা বেড়ে না যায়, সে জন্যই তারা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে সিদ্ধান্ত যে খুশিমনে নেয়া হয়েছে তা ভাবার কারণ নেই বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরে রাখা হবে, যখনই মনে হবে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়া সম্ভব, তখনই ফিরে যাওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপাতত দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুখোমুখি ক্লাস বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকবে। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যেখানে অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব, সেখানে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা থাকবে। এছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমও চালু থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তবে সেখানেও মুখোমুখি ক্লাস বন্ধ হবে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এখন যেভাবে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে অর্থাৎ অসুস্থ হলে আইসোলেশন বা বাড়িতে পাঠানো ইত্যাদি বিষয় চালু থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষকদের অফিসে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও (ঢাবি) বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে সময় খোলা থাকবে ঢাবির সব আবাসিক হল। সেশনজট নিরসনে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস চলবে অনলাইনে, সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে প্রশাসনিক কার্যালয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পরীক্ষার

সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে দুই সপ্তাহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত কলেজ বন্ধ রাখা হবে। সময়ে পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চলবে।

পাশাপাশি দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সশরীরে ক্লাস বা পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিতে শুরু করেছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেশনজট এড়াতে সব বর্ষের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ মোট পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে, সরকারি, বেসরকারি অফিস শিল্প-কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা গ্রহণ সনদ নেয়ার বাধ্যবাধকতার কথা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সমাবেশ বা অনুষ্ঠানের বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, এসব অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তাছাড়া যারা এসব ক্ষেত্রে যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই টিকার সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষার সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি অফিস শিল্প-কারখানায় কর্মরতদের অবশ্যই টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়ে দায়িত্ব বহন করবে। বাজার, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারক করবে।

এর আগে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনসহ মোট সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১০ জানুয়ারি ১১টি বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে কার্যকর হয়েছে।

দেশে ২০২০ সালের মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। তার চার মাসের মাথায় আবারো দুই সপ্তাহের বন্ধের ঘোষণা এল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন