পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাঘ রক্ষায় বিশ্বের ১৩টি বাঘসমৃদ্ধ দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার বন্য বাঘ সংরক্ষণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। যৌথ কুয়ালালামপুর বিবৃতি বাস্তবায়ন বাঘের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী গতকাল অনুষ্ঠিত বাঘ সংরক্ষণবিষয়ক চতুর্থ এশিয়া মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন।
মালয়েশিয়ার পানি, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি তাকিউদ্দীন বিন হাসান সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস পিডিআর, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, নেপাল ও রাশিয়ার মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা এবং বাঘসমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার অন্যান্য বন্যপ্রাণীসহ আমাদের জাতীয় প্রাণী সংরক্ষণে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উন্নতির জন্য সংবিধানে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এ বাঘ শিকারের জন্য দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় বাঘ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি (২০১৭-২২) এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২৭) বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে রয়েছে বাঘ জরিপ, জেনেটিক অধ্যয়ন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ড্রোনের মাধ্যমে স্মার্ট টহল ও পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। এছাড়া সুন্দরবন ও বেঙ্গল টাইগারের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বন বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বনমন্ত্রী বলেন, বাঘ-মানব সংঘাত প্রশমিত করতে বাংলাদেশ সরকার ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি (সিএমসি) এবং কমিউনিটি প্যাট্রোল গ্রুপ (সিপিজি) গঠন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রমে নিয়োজিত করেছে। বন্যপ্রাণী শিকার ক্ষতিপূরণ বিধিমালা, ২০২১-এ বাঘের হাতে নিহত ব্যক্তির জন্য ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়ার বিধান রয়েছে।
মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য রোধে বন বিভাগের অধীনে ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট গঠন করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বাড়াতে শেখ কামাল বন্যপ্রাণী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা জোরদার করেছি এবং ২০১১ সালে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের জন্য একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছি।
উল্লেখ্য, বাঘ সংরক্ষণের বিষয়ে ১৯-২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চতুর্থ এশিয়া মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন বন্য বাঘের সংখ্যা এবং এর শিকার স্থিতিশীল করার পাশাপাশি বাঘসমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে নতুন সমস্যা মোকাবেলা করে সংরক্ষণ প্রচেষ্টা জোরদারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাঘসমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং বাঘের আবাসস্থলের অবক্ষয় রোধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছের।
সম্মেলনটি বন্য বাঘ শিকার এবং আবাসস্থলের নিয়মিত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, বাঘ ও এর শিকার, আবাসস্থল রক্ষায় ক্রমাগত এবং পদ্ধতিগত টহল দেয়ার জন্য উপযুক্ত এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োগ ক্ষমতা জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বাড়াতে উন্নত প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারসহ সব স্টেকহোল্ডারের জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সব স্তরে পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময়ের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য আন্তঃসীমান্ত ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।