বরিশালে বিআইডব্লিউটিএর ১২ একর জমি বেদখলে

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএর জমি দখল করে গড়ে ওঠা কাঁচাবাজার ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বরিশালে বিআইডব্লিউটিএর প্রায় ১২ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। ওই জমিতে গড়ে উঠেছে প্রায় চার হাজার অবৈধ স্থাপনা। বেহাত হওয়া এসব জমির আনুমানিক মূল্য এক হাজার কোটি টাকা। যুগের পর যুগ সরকারি জমিতে এমন দখলদারিত্ব চললেও উদ্ধারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। কর্তৃপক্ষ বলেছে জরিপ চলছে, শিগগিরই উচ্ছেদ শুরু হবে। তবে বারবার উচ্ছেদ হলেও পরক্ষণেই তা আবার দখল হয়ে যায়।

বরিশাল মহানগরীর দক্ষিণে পক্স ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উত্তরের আমানতগঞ্জ কবরস্থান পর্যন্ত সাড়ে মাইল এলাকা নিয়ে ১৯৬২ সালে বরিশাল নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬০ একরের বেশি ফোরশোর জমি অধিগ্রহণ পায় সরকারের কাছ থেকে। ১৯৯৬ সালে জেলা প্রশাসন একক জরিপ করে ৩৬ দশমিক ৩০ একরের একটি ম্যাপ করে বার্ষিক ৬৮ হাজার টাকা খাজনায় বন্দর কর্তপক্ষকে নবায়ন করে। তবে ম্যাপ পেলেও আজ পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকৃত জমি বুঝে পায়নি। সুযোগে শুরু হয় বন্দরের জমি অবৈধ দখল। দখলদাররা বলছেন, তাদের কাছে জমির স্থায়ী বন্দোবস্তের কাগজ রয়েছে। এর ভিত্তিতে তারা গড়ে তুলেছেন বহুতল স্থাপনা। এটি উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে তারা মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, বন্দরের নাগালের জমিতেও দোকান, হোটেল, বস্তি, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, মার্কেটসহ সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়া হয়েছে প্রকাশ্যে। পজেশন নিয়ে এগুলো ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুন অর রশিদের মতে, অধিকাংশের কাছে আছে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে জমি লিজ নেয়া কাগজ। এক্ষেত্রে উচ্ছেদ করা হলে তা আত্মঘাতী বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের অন্য স্থানে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের কার্যক্রম শুরু হলে বরিশালেও শুরু হয় দখলদার চিহ্নিত করার জরিপ কাজ।

সরকারি জমিতে স্থাপনা তৈরি করে দখলদাররা বিভিন্ন দপ্তর থেকে লিজ নেয়ার দাবি করছেন। তবে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান সরাসরি দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, জমি লিজ বা ভাড়া দেয়ার অন্য কারো এখতিয়ার নেই।  মাঠ জরিপে এরই মধ্যে চার হাজারের বেশি অবৈধ দখলদারের স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। ম্যাপ তৈরি হলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে বরিশাল নদী বন্দর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভাটির সময় কীর্তনখোলা নদীর পানির স্তর থেকে স্থলভাগের দিকের ৫০ গজ জমি বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন করা হয়। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় নদী বন্দরের উত্তর দক্ষিণে বিআইডব্লিউটিএর জমি দখলে নিয়ে ভূমিখেকোরা গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

সারা দেশে নদীর অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে ধারাবাহিক উচ্ছেদ কার্যক্রম চললেও বরিশালে গত পাঁচ বছরে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০১৯ সালের ২৩ মে বরিশালে অবৈধভাবে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার অবৈধ দখলকারীদের তালিকা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা নদী কমিশনে পাঠানো হলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, দখলদারদের সঙ্গে বরিশাল নৌ বন্দরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। কারণেই বরিশালে নদীতীর আজ পর্যন্ত অবৈধ দখলদারমুক্ত করা যায়নি।

জেলার সচেতন মহলের দাবি, এর আগে বরিশাল নৌ বন্দরের জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হলেও মাঝপথে তা থেমে যায়। এবারে অন্তত প্রকৃত অভিযান চালিয়ে সরকারি সম্পদ অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা হোক।

বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, দখলদারদের তালিকাপ্রাপ্তির পর যত দ্রুত সম্ভব বরিশালের প্রাণ কীর্তনখোলা নদীতীর মুক্ত করা হবে। উদ্ধার করা হবে সরকারি সম্পদ।

নদী বন্দরের জমি দখলদারদের বিষয়ে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সরকারি যে সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন জমি বা নদী অবৈধ দখল হয়েছে তাদের সবার আগে উদ্যোগী হতে হবে। তারা অবৈধ দখল উচ্ছেদে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তা চাইলে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। জেলার ১০ উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে নদী-খাল বিল জলাশয়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে বলে তিনি জানান।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বরিশাল নদী বন্দরের জমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষ্যে নানা কার্যক্রম চলছে। অচিরেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন