শেষের পথে শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নির্মাণাধীন শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সংস্কৃতিচর্চার লক্ষ্যে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ শৈলজারঞ্জন মজুমদার স্মরণে শান্তিনিকেতনের আদলে নির্মিত হচ্ছে শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মোহনগঞ্জ পৌরসভার বাহাম গ্রামে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই একর জমিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে।

শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকছে তিন তলাবিশিষ্ট একাডেমি ভবন, কনফারেন্স হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, সবুজ চত্বর পুকুর। আরো থাকছে একাডেমি প্রাঙ্গণে আধুনিক সুবিধাসংবলিত মেলা প্রাঙ্গণ।

রবীন্দ্রসংগীতের প্রখ্যাত ওস্তাদ ছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার। যিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরবারে রবীন্দ্রসংগীত জনপ্রিয় করেছেন। তিনি একাধারে রবীন্দ্রসংগীতের সুরস্রষ্টা, সংগীত পরিচালক লেখক ছিলেন। শৈলজারঞ্জন মজুমদার ১৯০০ সালের ১৯ জুলাই মোহনগঞ্জ থানার বাহাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে কলকাতায় অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজ কণ্ঠে আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার হূদয় আমার নাচিছে আজিকে কবিতা দুটির আবৃত্তি শুনে তার ভক্ত হয়ে যান। এর পর থেকেই রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে চলে আসেন তিনি। তারপর দীর্ঘ পথচলা। অবশেষে কলকাতার সল্টলেকের বাড়িতে ১৯৯২ সালের ২৪ মে প্রয়াত হন তিনি।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের আরেক কৃতী সন্তান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানের প্রচেষ্টায়  নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিককেন্দ্র।

জানা যায়, শৈলজারঞ্জন মজুমদার বিশ্বভারতীর শিক্ষক ছিলেন শিক্ষকতাকালীন নোবেল বিজয়ী কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকেই রবীন্দ্রসংগীতের দীক্ষা নেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সংগীতের প্রতি ভালোবাসার কারণে অত্যন্ত আপ্লুত হন এবং তাকে সংগীত ভাবনার প্রথম প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেন ১৯৩৯ সালে। তার আগে ১৯৩২ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। শৈলজারঞ্জন অগণিত রবীন্দ্র নাটক, নৃত্য নাটক পরিচালনা করেন। তিনি অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের সুর তৈরি করেন। শান্তিনিকেতনের বাইরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে। যার উদ্যোক্তা ছিলেন মোহনগঞ্জের কৃতী সন্তান বিশ্ব ভারতীয় সংগীত ভবনের অধ্যক্ষ শৈলজারঞ্জন মজুমদার।

মোহনগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দুলাল ধর জানান, শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিককেন্দ্রটি হয়ে উঠবে দুই বাংলার রবীন্দ্রসংগীতপ্রেমীদের সেতুবন্ধন মিলনক্ষেত্র।

কবি রইস মনোরম বলেন, প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতজ্ঞ শৈলজারঞ্জন মজুমদারের স্মরণে নির্মিতব্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি ভবিষ্যতে মোহনগঞ্জবাসী তথা বৃহৎ ময়মনসিংহের জন্য জ্ঞান আহরণ মর্যাদা লাভে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোহনগঞ্জ পৌরসভার বাহাম এলাকায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নামে একটি বিশ্বমানের সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে  ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নির্মিত হলে অঞ্চলে যেমন রবীন্দ্রসংগীত সংস্কৃতির প্রচার, প্রশিক্ষণ নতুন শিল্পী তৈরির পথ সুগম হবে, তেমনি শিল্প-সাহিত্য-সংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের অবদান বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীতের সুরকার হিসেবে তার স্বীকৃতি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। এছাড়া এলাকার পর্যটন শিল্পের বিকাশে কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন