পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ছে। বছরের শুরু থেকে শেয়ার কেনার প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ফলে সাপ্তাহিক লেনদেন ও সূচকে উত্থান ধরে রেখেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এক্সচেঞ্জটির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহের ব্যবধানে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড, অ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড ও বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) লিমিটেডের শেয়ার। অন্যদিকে দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বাড়লেও সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের সপ্তাহে ডিএসইএক্স ২৯ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বাড়লেও গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ৮৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে সূচকটি ৭ হাজার ১০৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৭ হাজার ১৭ পয়েন্টে। সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বেক্সিমকোর শেয়ার। গত সপ্তাহে সূচকটিতে বিবিধ খাতের কোম্পানিটি ২৮ দশমিক ৩ পয়েন্ট যোগ করেছে। এরপরে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই। সূচকে কোম্পানিটির ৭ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিএসআরএম যোগ করেছে ৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
এছাড়া সূচকটির উত্থানে অবদান রাখা শীর্ষ অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট, লিন্ডে বাংলাদেশ ৪ পয়েন্ট, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ৩ দশমিক ৯ পয়েন্ট ও ওরিয়ন ফার্মা ৩ দশমিক ৮ পয়েন্ট করে যোগ করেছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৯ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬৩৫ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৬১৬ দশমিক ৩০ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৫০৮ দশমিক ৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৫০১ দশমিক ৭১ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট ৮ হাজার ২৪৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৭ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪১১ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ সময়ে টাকার অংকে ডিএসইর গড় লেনদেনও বেড়েছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন বেড়েছে ৮২ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১১ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। ওষুধ ও রসায়ন খাত ১০ দশমিক ৬ শতংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। পরের অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। পঞ্চম স্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। খাতটির লেনদেন ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া পরের অবস্থানে রয়েছে জীবন বীমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং চামড়া খাত। খাত তিনটির লেনদেন হয়েছে যথাক্রমে ৬, ৫ দশমিক ৯ ও ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
ডিএসইতে খাতভিত্তিক ইতিবাচক রিটার্নে গত সপ্তাহে শীর্ষে ছিল ভ্রমণ খাত। খাতটিতে গত সপ্তাহে রিটার্ন এসেছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে সেবা খাত, ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতে ইতিবাচক রিটার্ন হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া বিবিধ খাত ৪ দশমিক ৮, চামড়া খাতে ২ দশমিক ৬ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে সিমেন্ট খাতে, ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে সিরামিক খাত, ২ দশমিক ২ শতাংশ। এই তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিকম, আইটি ও প্রকৌশল খাত।
সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনও বেড়েছে। সপ্তাহের শুরুতে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। সপ্তাহ শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২৩৮ কোটি টাকা বা দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৯০টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টির, কমেছে ১৩৯টির, অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির আর লেনদেন হয়নি ৪টি কোম্পানির শেয়ার।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে সমাপনী দরের ভিত্তিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি হলো ফার্মা এইডস, ফু-ওয়াং ফুড, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস, শমরিতা হসপিটাল, দেশ গার্মেন্টস, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইয়াকিন পলিমার, ওরিয়ন ইনফিউশন, জেমিনি সি ফুড ও এসিআই ফরমুলেশনস।
অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ২৩০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ২৬২ কোটি টাকার। গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার ৮১৭ দশমিক ১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২০ হাজার ৫৪৫ দশমিক ৯১ পয়েন্টে। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে মোট ৩৫০টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২০১টির। কমেছে ১২৩টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির শেয়ারদর।
