টেলিকম ও প্রযুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে নতুন একটি চিপ ম্যানুফ্যাকচারিং কমপ্লেক্স তৈরি করছে ইন্টেল। এতে অন্তত ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। খবর নিউইয়র্ক টাইমস।

বিভিন্ন উপকরণ-স্বল্পতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কম্পিউটার চিপসের ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি মাথায় নিয়ে ওহাইওর কলম্বাস এলাকায় দুটি চিপ কারখানা স্থাপন করছে ইন্টেল। এতে প্রত্যক্ষভাবে তিন হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া আশপাশে সংশ্লিষ্ট অনেক শিল্পেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইন্টেলের সিইও প্যাট্রিক জেলসিংগার। সাক্ষাৎ শেষে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা আসে। গত বছর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে জোর দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। চীন নির্ভরতা কমানো এবং সেমিকন্ডাক্টর খাতে আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যমাত্রায় বিভিন্ন চিপ জায়ান্ট বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া অ্যাপলের মতো কোম্পানি নিজস্ব চিপ ডিজাইন ও তৈরিতে মনোযোগ বাড়িয়েছে। এমনকি বেশ কয়েকটি ডিভাইসে নিজস্ব চিপ ব্যবহার করেছে অ্যাপল।

এদিকে গত বছর ইন্টেলের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই চিপ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে বিনিয়োগ বাড়ান জেলসিংগার। গত বছর এক ঘোষণায় তিনি জানান, আগামী এক দশকে ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ইন্টেল।

মহামারীতে সৃষ্ট সরবরাহ চেইন সংকটের কারণে ধুঁকছে ভিডিও গেমস, ইলেকট্রনিকস, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে কম্পিউটার ও গাড়ি শিল্প। করোনার মতো সংকট যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারারদের বুঝিয়ে দিয়েছে বিদেশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা উৎপাদনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসের মস্তিষ্ক হিসেবে পরিচিত বেশির ভাগ চিপ তৈরি হয় তাইওয়ানে। মহামারীতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহে হিমশিম খেয়েছে টিএসএমসির মতো তাইওয়ানিজ চিপ নির্মাতারা।

চিপ সংকটের বিষয়টি আমলে নিয়ে বাইডেন প্রশাসন চিপস অ্যাক্ট নামে একটি আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে। এতে ইন্টেলের মতো স্থানীয় কোম্পানিকে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ওহাইওতে নতুন চিপ কমপ্লেক্স স্থাপনের মাধ্যমে ৪০ বছর পর স্বদেশে নতুন কোনো কারখানা চালু করল ইন্টেল। সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক কোম্পানিটির অন্য যেসব অঙ্গরাজ্যে কারখানা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ওরেগন, নিউ মেক্সিকো ও আরিজোনা।

ওহাইওর কলম্বাসের যে এলাকায় নতুন চিপ কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে, সেটি সাশ্রয়ী জমি ও আবাসনের জন্য পরিচিত। এছাড়া নিকটবর্তী ওহাইও স্ট্যাট ইউনিভার্সিটির সদ্য পাস করা ছাত্রদের আকর্ষণ করতে চাইছে ইন্টেল।

সাম্প্রতিক চিপ সংকটের অন্যতম কারণ মহামারী হলেও দীর্ঘদিন ধরে খাতটি এশীয় দেশগুলোয় কেন্দ্রীভূত হওয়ার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। চিপ কারখানা স্থাপনে এশীয় দেশগুলোর সরকারের ভর্তুকি ও অন্যান্য সুবিধা এতে ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে বৈশ্বিক চিপ উৎপাদনের ৩৭ শতাংশ হতো, বর্তমানে তা ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে ইউরোপের ভূমিকা ৪০ শতাংশ থেকে কমে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

উন্নততর ও নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগ চিপ আসে তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি থেকে। মূল ভূখণ্ড চীনের নিকটবর্তী হওয়ায় এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে পেন্টাগন। সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভরতাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে বাইডেন প্রশাসন। গত জুনে সিনেটে দুই দলের সম্মতিতে নতুন একটি বিল প্রস্তাবনা উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চিপ কারখানা স্থাপন এবং চিপ শিল্পে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব তুলেছে তারা।