প্রাইমার্কের ব্রিটিশ ব্যবসা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডাবলিনভিত্তিক ফ্যাশন চেইনটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডস (এবিএফ) এ লক্ষ্যে কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শও শুরু করেছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রাইমার্কের ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা এবিএফের। সংস্থাটির ভাষ্য, দোকানগুলোয় খুচরা ব্যবস্থাপনা কাঠামো সহজ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দোকানগুলোয় আরো পরিষ্কার জবাবদিহি, বৃহত্তর নমনীয়তা ও আরো ব্যবস্থাপনা সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে। যদিও ব্যয়সংকোচনের অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপ ও ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও শক্তিশালী বিক্রি উপভোগ করছে প্রাইমার্ক। তবে উচ্চ জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে চাপ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে এবিএফ। যুক্তরাজ্য জুড়ে ১৯১টি দোকানে মোট ২৯ হাজার কর্মী রয়েছেন প্রাইমার্কের। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের কার্যক্রম শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে প্রাইমার্কের খুচরা বিক্রি বিভাগের পরিচালক কারি রজার্স বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত এ পরিবর্তনের মাধ্যমে চেইনজুড়ে একটি সরলীকৃত ও আরো সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে উঠবে। পাশাপাশি এ উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মীদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতির সুযোগ তৈরি এবং আরো নমনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখন ছাঁটাই হতে যাওয়া সহকর্মীদের সহযোগিতার দিকে মনোনিবেশ করছি। এরই মধ্যে আমরা কিছু প্রক্রিয়া শুরুও করেছি।
এমন সময়ে চাকরি ছাঁটাইয়ের এ ঘোষণা দেয়া হলো, যখন ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের কারণে দোকানগুলোয় বিক্রি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ কভিডের নতুন ধরনটির সংক্রমণ এড়াতে ব্রিটিশরা সরাসরি দোকানে যাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া সংস্থাটির অনলাইনে বিক্রির কোনো কার্যক্রমও নেই। গ্রুপটি বলেছে, ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬ সপ্তাহে প্রাইমার্কের বিক্রি মহামারীর আগের তুলনায় ১০ শতাংশ কম ছিল। ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ার কারণে দোকানে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কমে গিয়েছে।
যদিও এবিএফ জানিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমণ সত্ত্বেও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ও বিক্রির পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আগের বছরের এ সময়ে লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ থাকায় সংস্থাটির বিক্রি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল।
সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাগুলো গত বছরের শেষ দিক থেকে শিথিল হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে গ্রুপটি। যদিও এখনো বন্দরগুলোয় ও পণ্য পরিবহনে কিছু বিলম্ব রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মুদি, চিনি, উপাদান ও কৃষি ব্যবসায় জ্বালানি, লজিস্টিকস ও পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। কার্যক্রম ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যয় মোকাবেলায় চেষ্টা করা হচ্ছে। তর পরও কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে হতে পারে।
মূল্যস্ফীতির চাপ সত্ত্বেও চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রাইমার্কের পণ্যের দাম বাড়বে না বলে জানান এবিএফের আর্থিক বিভাগের প্রধান জন বেসন। তিনি বলেন, ভোক্তাদের জন্য প্রাইমার্কের দাম যেখানে আছে, ঠিক সেখানেই থাকবে। এটাই আমাদের অন্যতম একটি লক্ষ্য।
এদিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার ও সুপারড্রাইসহ অন্যান্য ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান জুলিয়ান ডানকারটন বলেন, ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে ২ শতাংশ দাম বাড়তে পারে।
ব্রিটিশ আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনের ইকুইটি বিশ্লেষক লরা হোয় বলেন, এবিএফের বৈচিত্র্যময় ব্যবসা মহামারীতেও সংস্থাটির শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুচরা বিক্রিতে মনোযোগ দিচ্ছে গ্রুপটি। আগের বছরের একেবারে বন্ধের তুলনায় বর্তমানে সংস্থাটির আয় উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। তবে প্রাইমার্কের বিক্রি এখনো প্রাক-কভিড স্তরে পৌঁছতে পারেনি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি খুচরা ব্যবস্থাপনা কাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে খুচরা ব্যবসাকে আরো লাভজনক করে তুলতে চাইছে এবিএফ।