জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব

কফি উৎপাদনে নতুন উপায় খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ব্রাজিলের এসপিরিতো সান্তো প্রদেশের একটি বাগান থেকে কফি বিন সংগ্রহ করছেন শ্রমিকরা ছবি: রয়টার্স

বিশ্বে বহুল ব্যবহূত পানীয় পণ্য কফি। পণ্যটির ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে উৎপাদন বাড়ছে, যা নানা কারণে জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পরিবেশবিদ বিজ্ঞানীরা কফি উৎপাদনের টেকসই বিকল্প উপায় খুঁজছেন।

কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ল্যান্ডস অ্যান্ড ওয়াটারসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বাম্বি সেমরক বলেন, বেশির ভাগ কফি আর্দ্র মিলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে কফি পরিষ্কার ভেঙে গুঁড়ো করতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হয়। এরপর এসব কফি শুকিয়ে রোস্ট অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে কয়েক ধাপে জ্বালানি ব্যবহার করতে হয়।

ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের দেয়া তথ্যমতে, গত তিন দশকে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন বেড়েছে ৬০ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, বন উজাড় থেকে শুরু করে বিপুল বিশুদ্ধ পানি জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে কফি উৎপাদনে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। ধ্বংসের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিচ্ছে পৃথিবীকে।

ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ কফি উৎপাদক দেশ। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলে অ্যামাজন বন উজাড় ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০২০ সালের আগস্ট এবং গত বছরের জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার ২৩৫ বর্গকিলোমিটার বা হাজার ৪২৯টি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ জায়গার বন উজাড় করা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে বনাঞ্চল নিধনের পরিমাণ বেড়েছে ২২ শতাংশ।

ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক জানায়, ১২৫ মিলিমিটার কফি উৎপাদনে ১৪০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে জ্বালানির ব্যবহারও নেহাত কম নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিনে কফি উৎপাদনের কারণে যেমন জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও কফি শিল্প বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। গত বছরই ব্রাজিল ভয়াবহ খরা তুষারপাতের সম্মুুখীন হয়। প্রায় ৯০ বছরের মধ্যে দেশটি এমন বৈরী আবহাওয়ার মুখে পড়ে। কারণে দেশটির কফি উৎপাদনে ধস নামে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে। অ্যারাবিকা কফির দাম বেড়ে সাত বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে।

পণ্যবাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পণ্যটির দাম ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। ব্রাজিল, ভিয়েতনাম কলম্বিয়ার মতো সরবরাহকারী দেশগুলোয় চলতি বছরও উৎপাদন নিম্নমুখী থাকবে। ফলে বিশ্ববাজারে চলমান অস্থিতিশীলতা অনিশ্চয়তা আরো প্রকট হবে।

কফি উৎপাদনের কারণে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য গবেষকরা বিকল্প উপায় খুঁজছেন। ল্যাবে টেকসই কফি উৎপাদনের ধারণা দিয়েছেন ফিনল্যান্ডের এক দল গবেষক। এর মাধ্যমে উল্লিখিত সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে জানান তারা। তবে প্রযুক্তি অনেক বেশি ব্যয়বহুল। ফলে তা আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ফিনল্যান্ডের ভিটিটি টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এরই মধ্যে সফলভাবে সেলুলার এগ্রিকালচারের মাধ্যমে বায়োরিঅ্যাক্টরে কফি সেল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। প্রক্রিয়ায় কফি উৎপাদন অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ল্যাবে কফি উৎপাদন করলে বন নিধনের প্রয়োজন পড়বে না। প্রক্রিয়ায় পানিও লাগবে অনেক কম। আরেকটি সুবিধা হলো, প্রক্রিয়ায় সব সময় নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা, আলো অক্সিজেনের মাধ্যমে কফি উৎপাদন করা হবে। ফলে বাজারে সরবরাহ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা প্রায়ই তৈরি হয়, তা আর থাকবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন