মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা তৃতীয় উপন্যাস ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’। আলোচিত এ উপন্যাস বড় পর্দায় আনছেন কলকাতার পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়। আর লাখো বাঙালি পাঠকের হূদয়ে দোলা দেয়া কুসুম চরিত্রে থাকছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রিয় মুখ জয়া আহসান। এ বিষয়ে জয়া আহসানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সিনেমা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের ছাপানো সংবাদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন।
দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে এ ছবির পরিকল্পনা চললেও উপন্যাসের স্বত্ব এবং বাজেটসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এতদিন ঘোষণা দেয়া সম্ভব হয়নি। ছবিতে মূল উপন্যাসের নামটাই রাখছেন পরিচালক। জয়া আহসান ছাড়াও আছেন আবীর চট্টোপাধ্যায় ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। দেখা যাবে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কেও।
চলচ্চিত্র নির্মাতা সুমন বলেন, ‘ছবিটার জন্য দুটো জিনিস খুব জরুরি ছিল। দক্ষ অভিনেতা ও বড় বাজেট। ভালো অভিনেতা নির্বাচনের পাশাপাশি ছবির বিপণনের দিকটাও মাথায় রাখতে হয় এখন। আবীর, জয়া, পরম সে ব্যালান্সটা করতে পারবেন। প্রযোজক সমীরণ দাস বাজেটের বিষয়ে আমাকে নির্ভার করেছেন। এ ছবির শুটিং শিডিউল ২৫ দিনের, যেটা বাংলা ছবিতে এখন দেখা যায় না।’
ছবির আবহসংগীতের দায়িত্বে থাকছেন প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পূর্ববর্তী সময়কে ফ্রেমবন্দি করবেন সুমন। তিরিশের দশকের শেষের দিক থেকে চল্লিশের দশকের শুরু পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘মূল উপন্যাসে সময়টা আরো পেছনে ছিল, আমি খানিকটা এগিয়ে এনেছি। তাছাড়া উপন্যাসের সবকিছু ছবির চালচিত্রে ধরানো সম্ভব নয়। দুটো মাধ্যমের চলন আলাদা। আমি চারিত্রিক রসায়নের ওপর বেশি জোর দিয়েছি।’
উপন্যাসের শশীর চরিত্রে রয়েছেন আবীর। জয়াকে দেখা যাবে কুসুমের ভূমিকায়। কুমুদের চরিত্রটি করছেন পরমব্রত। পরিচালক জানিয়েছেন, ছবিতে শশীর অংশটা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমার মতে, মানিক বাবুর সৃষ্টির মধ্যে শশী অসম্ভব জোরালো একটা চরিত্র।’
উপন্যাসে দেখা যায়, কলকাতায় পড়াশোনা করা শশী গ্রামে আটকে পড়ে। লন্ডনে গিয়ে ডাক্তারিতে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে পূরণ হয় না তার। শশীর এ আটকে পড়া, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার সমস্যা... এ
দিকগুলো ভাবিয়েছে পরিচালককে। তিনি বলেন, ‘গত শতাব্দীতে আমাদের একটা ইন্টেলেকচুয়াল ফেইলিউর আছে। যার ফল আমরা এখন এ ভয়ংকর ধর্মীয় উন্মাদনা, স্বৈরতন্ত্রের উত্থান দেখছি। বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত মানুষের যেখানে যা বলার, সেখানে তারা সেটা বলেননি। কম্প্রোমাইজ করেছেন। শশীর চরিত্রটা এ ইন্টেলেকচুয়াল ফেইলিউরের একটা প্রতীক আমার কাছে। মানুষকে কিছু নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে হয় জীবনে। অনেকে সেটা পারে না।’
উপন্যাসটা নিয়ে বলা যায়, পুতুলনাচের ইতিকথার মাঝে আক্ষরিক অর্থে পুতুলনাচের কোনো কাহিনী নেই। কিন্তু মানুষ যে কী করে পুতুলের মতো নেচে বেড়ায়। আড়াল থেকে কেউ একজন কলকাঠি নাড়ছেন। তা প্রকাশিত হয়। এখানে শুধু পুতুলদের কথা ব্যক্ত হয়নি, বরং মানুষ স্বত্বার মধ্য দিয়ে মানুষ ও পুতুলের দ্বৈরথ নির্মাণ করেছেন। এ উপন্যাসের আরেকটি দিক হলো, প্রতিটি চরিত্র একই সঙ্গে দুটো জীবনযাপন করে। শশী কি কুসুমকে ভালোবাসে না? বাসে। তার চরিত্রের দুটো ভাগ—একটায় তার আবেগ, কল্পনা। অন্যদিকে বাস্তবতা। কুসুমকে পুরোপুরি প্রশ্রয় দেয় না ঠিকই, কিন্তু একদিন না এলেই সে ব্যাকুল হয়। যুগ্ম অস্তিত্বের আরো উদাহরণ আছে উপন্যাসে। তাছাড়া শশীর সঙ্গে কুসুমের কথোপকথন অসাধারণ।
উপন্যাসের যে কয়টা অংশ আছে তার প্রতিটিতে প্রধান হলো শশী। তারই অনুভবে অভিজ্ঞতায় ওগুলো দানা বেঁধেছে।
সুমনের বাবা অরুণ মুখোপাধ্যায় পুতুলনাচের ইতিকথা মঞ্চস্থ করেছিলেন। সেই নাট্যরূপ ছিল নির্মাতার এ ছবি তৈরির পেছনে প্রথম অনুপ্রেরণা।