লংকাবাংলা ও সিটি ব্রোকারেজের নিজস্ব ওএমএস উদ্বোধন

পুঁজিবাজারে ডিজিটাল লেনদেনের যুগ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিজস্ব ওএমএসের মাধ্যমে তাদের গ্রাহককে সেবা দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে এতদিন স্টক এক্সচেঞ্জের ওএমএস ব্রোকারেজগুলো ব্যবহার করে আসছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে ওএমএস ব্রোকারেজ পর্যায়ে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রথমবারের মতো লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ সিটি ব্রোকারেজ নিজস্ব ওএমএস চালু করেছে। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ পর্যায়ে নিজস্ব ওএমএসের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের যুগ শুরু হলো।

দেশের ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মধ্যে সবার প্রথমে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে নিজস্ব ওএমএস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২০১৩ সালে ট্রেড এক্সপ্রেস নামে ওএমএস সেবা চালু করে। পাশাপাশি প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও (ডিএসই) নিজস্ব ওএমএস চালুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে গত বছর ডিএসইর কাছ থেকে -সংক্রান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এক্সচেঞ্জটিতে নিজস্ব ওএমএস চালুর উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তিনটি শাখায় আংশিকভাবে ওএমএস সেবাটি চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানটির সব শাখাতেই এটি চালু করা হবে।

বিষয়ে জানতে চাইলে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈন বণিক বার্তাকে বলেন, সিএসইতে ২০১৩ সাল থেকেই আমাদের নিজস্ব ওএমএস ছিল। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেশি হওয়ার কারণে আমরা এখানে নিজস্ব ওএমএস চালু করতে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম। বিএসইসির বর্তমান কমিশন ব্রোকারেজ পর্যায়ে ওএমএস সেবা হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়ার কারণে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এজন্য বিএসইসিসহ স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি সিটি ব্রোকারেজ গতকাল তাদের সিলেট শাখায় সিটি ইনফিনিটি নামে নতুন ওএমএস চালু করেছে। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে এটি চালু করা হবে। বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন আফফান ইউসূফ বণিক বার্তাকে বলেন, নিজস্ব ওএমএস চালুর কারণে আমরা বেশকিছু সুবিধা পাব। এটি চালুর ফলে এখন থেকে শর্ট সেল হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। মার্জিন ঋণ ব্যবস্থাপনা আরো দক্ষতার সঙ্গে করা সম্ভব হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। নতুন নতুন বিনিয়োগকারীকে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এমনকি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ব্লুমবার্গের মাধ্যমে সরাসরি আমাদের ওএমএসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহজেই লেনদেন করতে পারবেন।

ডিএসইর পক্ষ থেকে ব্রোকারদের কাছে ওএমএস সিস্টেম হস্তান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ২০২০ সালের আগস্টে। সে সময় দেশের সব ব্রোকারেজ হাউজের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চায় এক্সচেঞ্জটি। ট্রেকহোল্ডারদের ওএমএসের জন্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সুবিধা নিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এপিআই চালুর বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে ডিএসই।

ব্রোকারেজ পর্যায়ে ওএমএস হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, এতদিন ডিএসই নিজে ওএমএস সুবিধা দিয়ে আসছিল। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে এর মাধ্যমে সব ধরনের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ব্রোকারেজ পর্যায়ে এটি হস্তান্তর করার ফলে তারা নিজেদের মতো করে গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে সব ধরনের সেবা দিতে পারবে। সব ব্রোকারেজ নিজেদের ওএমএস চালু করলে তখন পুঁজিবাজারের সব বিনিয়োগকারী এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের ডিজিটাইজেশনে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম।

কভিডের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ৬৬ দিন পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ ছিল। পর্যাপ্ত ডিজিটাল অবকাঠামো না থাকার কারণে সেই সময় পুঁজিবাজারের কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হয়নি। বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজার চালুর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসই সক্ষমতা বাড়াতে নতুন ওএমএস আনার পাশাপাশি এটি ব্রোকারেজ পর্যায়ে উন্মুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

প্রথমবারের মতো ব্রোকারেজ পর্যায়ে ওএমএস চালুর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আমরা পুঁজিবাজারের ডিজিটাইজেশনের জন্য কাজ করছি। তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি ছিল ব্রোকারদের নিজস্ব ওএমএস চালুর মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়নের দিকে আমরা এগিয়ে গেলাম। ব্রোকারেজ পর্যায়ে ওএমএস চালুর ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর চাপ কমবে এবং সব ব্রোকারেজকেই এটি নিতে হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন