ডেল্টা লাইফ ইস্যুতে আপিল বিভাগে শুনানি আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসক ইস্যুতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আজ। আপিল বিভাগের ফুল কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়োগ করা প্রশাসককে অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের ফুল কোর্টে নিষ্পত্তির আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদালত।

এর আগে বছরের জানুয়ারি আইডিআরএ কর্তৃক ডেল্টা লাইফে নিয়োগ করা প্রশাসক নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি খসরুজ্জামান মো. মাহমুদ হাসানের যৌথ বেঞ্চ। রায়ে আইডিআরএ কর্তৃক ডেল্টা লাইফে প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কোম্পানিটির বরখাস্তকৃত পর্ষদের দায়ের করা রিটকে অকাট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের ফলে সেদিন থেকে কোম্পানিটিতে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসক তার পদ হারান। এরই ধারাবাহিকতায় সেদিনই কোম্পানিটির বরখাস্ত হওয়া পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং একটি পর্ষদ সভাও আয়োজন করে।

হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদালতে আবেদন করে আইডিআরএ। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার জজের আদালত প্রশাসককে অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের ফুল কোর্টে নিষ্পত্তির জন্য পাঠান। চেম্বার জজের আদেশের ফলে চারদিনের মাথায় আবারো ডেল্টা লাইফে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসক তার দায়িত্বে পুনর্বহাল হয়েছেন। অবশ্য আদালতের পক্ষ থেকে সময়ে বিবদমান পক্ষগুলোকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করারও আদেশ দেয়া হয়।

আদালতে আইডিআরএর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান, আবুল কালাম আজাদ কারিশমা জাহান।

সাধারণ বীমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে কোম্পানিটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। সেদিন বিকালেই পুলিশের সহায়তায় কোম্পানিটির কার্যালয়ে গিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মধ্যেই তার ওপর আস্থা হারিয়ে ডেল্টা লাইফের পরামর্শকের দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে কোম্পানিটির নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনিও পদত্যাগ করেন। তার জায়গায় আইডিআরএর সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খানকে সর্বশেষ কোম্পানিটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে কোম্পানিটির পর্ষদ। পাশাপাশি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়। যা বর্তমানে দুদক অনুসন্ধান করে দেখছে। অন্যদিকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আইডিআরএ ডেল্টা লাইফের স্থগিত হয়ে যাওয়া পর্ষদের সদস্যরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করেছেন। এরই মধ্যে কোম্পানিটির ওপর আইডিআরএর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিশেষ অনুসন্ধানমূলক নিরীক্ষা করানো হয়েছে এবং এতে বেশকিছু অনিয়মও খুঁজে পায় সংস্থাটি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করেছে। তার ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকির

অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইডিআরএ ডেল্টা লাইফের পর্ষদের চলমান বিবাদ দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে একটি বৈঠকও হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন