ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রি-এজেন্ট ও অর্থ সংকট

কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট তিন মাস বন্ধ, বিপাকে রোগীরা

নুর উল্লাহ কায়সার, ফেনী

তালাবদ্ধ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস ইউনিট ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে হেমোডায়ালাইসিস ইউনিটে দীর্ঘ তিন মাস সেবাদান বন্ধ রয়েছে। রি-এজেন্ট অর্থসংকটের কারণে ইউনিটটি বন্ধ থাকায় সুবিধাভোগী অসহায় দরিদ্র রোগীরা দিশেহারা। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে বাড়তি ব্যয়ে কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে না পেরে অনেক রোগী চিকিৎসা নেয়া বন্ধ করে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অবস্থায় দ্রুত সেবাটি চালুর দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। তবে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, রি-এজেন্ট অর্থপ্রাপ্তি ছাড়া ইউনিটটি আর চালানো সম্ভব নয়। 

ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফেনী আশপাশের জেলা থেকে আসা অসহায় দুস্থ রোগীদের কথা চিন্তা করে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করা হয়। উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থে চালু হওয়া ইউনিটে তিন শিফটে প্রতিদিন ৩০ জন কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস সেবা চলে আসছিল। প্রাইভেট হাসপাতালের হাজার থেকে সাড়ে হাজার টাকা মূল্যের সেবাটি হাসপাতালে মাত্র ৫০০ টাকায় রোগীরা ভোগ করতেন। আর্থিক সংকটে থাকা দীর্ঘ   মরণব্যাধি রোগ থেকে রক্ষা পেতে নিবন্ধনকৃত ৯০ জন কিডনি রোগী নিয়মিত হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করতেন। একজন কনসালট্যান্টসহ দুজন মেডিকেল অফিসারের অধীনে নয়জন নার্স ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে রিএজেন্ট না থাকা এবং নতুন বরাদ্দ না পাওয়ায় সেন্টারটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী স্বজনরা। অনেকেই অর্থের অভাবে ডায়ালাইসিস সেবা না নিয়ে চিকিৎসাহীনতায় মৃত্যুর মুখে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ ডায়ালাইসিস না করাতে পেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই পড়ে আছেন। বাড়তি ব্যয়ে নিম্ন আয়ের রোগীরা ঋণ করে জেলার প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিকে অনিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাসপাতালের নিয়মিত ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীরা জানান, কিডনি রোগীরা সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে দুবার হাজার টাকায় ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিস সেবা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এটি বন্ধ থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস খরচ পড়ছে প্রতিবারে হাজার টাকা করে দুই দফায় খরচ পড়ছে হাজার টাকা। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে নানা বিড়ম্বনা দালালের দৌরাত্ম্য। সুযোগে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ব্যয় বাড়ায় অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন না।

মাসুদুর রহমান নামের রোগীর স্বজন জানান, তার মামা বাবা দুজনই কিডনি রোগী। জেনারেল হাসপাতালে কম মূল্যে বেশ কয়েক মাস যাবত তারা নিয়মিত ডায়ালাইসিস সুবিধা ভোগ করে আসছেন। ইউনিটটি এখন বন্ধ থাকায় অর্থাভাবে তাদের ডায়ালাইসিস অনিয়মিত হয়ে গেছে। তাই গত দুই মাস ধরে প্রায়ই তিনি হাসপাতালে আসেন ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু হয়েছে কিনা জানতে। এটি চালু না হলে অর্থাভাবে একসময় তার মামা বাবার ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের পক্ষে প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যয় বহন করা অসাধ্য।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের প্রধান জয়দেব সাহা বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শের ভিত্তিতে ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীরা অনিয়মিত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোকের ঘটনাও ঘটতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কিডনি রোগীদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা নিতে হয়।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, দেশে সম্ভবত ফেনী গোপালগঞ্জেই জেনারেল হাসপাতালে হেমোডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে। ফেনীর হাসপাতালে আশপাশের চট্টগ্রামের মিরসরাই, খাগড়াছড়ির রামগড়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, লক্ষ্মীপুর নোয়াখালীর সেনবাগের রোগীরাও সেবা পেয়ে থাকেন। এখানে বর্তমানে নিবন্ধনকৃত ৯০ জন রোগী ডায়ালাইসিস সেবা পান। এছাড়া আরো ৩৫৭ জন রোগী নিবন্ধনের আবেদন করেছেন। ১০ শয্যায় দৈনিক ৩০টির অধিক ডায়ালাইসিস সম্ভব নয় বলে আবেদনগুলো বিবেচনা করা যাচ্ছে না। আশপাশের জেলায় সেবা না থাকায় এখানে ডায়ালাইসিস রোগীর চাপ বেশি। অবস্থায় সেবাটি বন্ধ হওয়ায় রোগীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকেই ফোনে হাসপাতালে এসে জানতে চাচ্ছেন কবে এটি আবার চালু হবে। আমরা এর কোনো জবাব দিতে পারছি না।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে ২০২০ সালে হাসপাতালে সেবাটি চালু করা হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তুলনামূলক গরিব অসহায় রোগীদের ইউনিটে সেবার জন্য নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। অন্য খাতের জনবল দিয়ে এটি চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়া রি-এজেন্ট না থাকায় এটি আর চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ রি-এজেন্টের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই এটি আবার চালু করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন