জোল কোয়েনের সিনেমায় ম্যাকবেথের অন্য রূপ

দ্য ট্র্যাজেডি অব ম্যাকবেথ সিনেমার দৃশ্যে ড্যানজেল ওয়াশিংটন ও ফ্রান্সিস ম্যাকডরম্যান্ড

শেকসপিয়ার আজও প্রাসঙ্গিক। সে কারণে সময়ের সঙ্গে তার রচিত ট্র্যাজেডিগুলোকে শিল্পী নির্মাতারা নতুন করে উপস্থাপন করেছেন। সে ধারায় সর্বশেষ সংযোজন জোল কোয়েনের দ্য ট্র্যাজেডি অব ম্যাকবেথ। শেকসপিয়ারের ট্র্যাজেডিকে তিনি নয়্যার ধারায় নিয়ে গেছেন। কেবল তাই নয়, ১০৫ মিনিটের সিনেমাটির মধ্যে সমালোচকরা জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট সিনেমা গথিক হররের ছাপ পাচ্ছেন। গত বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার আগেই সমালোচক মহল একে অস্কার সম্ভাব্য বলে রায় দিয়েছিল। বিশ্বায়ন এবং ওটিটি যুগে অ্যাপল টিভি প্লাসে মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমাটি সাধারণ দর্শকের কাছে পৌঁছে গেছে। দেখার পর কমবেশি সবাই বলছে, যারা ম্যাকবেথ পড়ার পাশাপাশি এর ট্র্যাজেডিকে বুঝেছে, সিনেমাটি মূলত তাদের জন্য।

শেকসপিয়ারের ট্র্যাজেডি বহুবার, বহুভাবে রূপান্তর করা হয়েছে। ভারতে বিশাল ভরদ্বাজ মকবুল নির্মাণ করেছিলেন। সাম্প্রতিককালে মালয়ালম ভাষায় ফাহাদ ফাসিল অভিনীত জোজি প্রশংসিত হয়েছে। এরও আগে ১৯৫৭ সালে জাপানের সামন্ত সমাজের প্রেক্ষাপটে আকিরা কুরোসাওয়া নির্মাণ করেছিলেন থ্রোন অব ব্লাড। অতি সাম্প্রতিক আমরা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের পরিচালনায় মন্দার নামে ওয়েব সিরিজ দেখলাম। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ধনতন্ত্র, অর্থ নারীর প্রতি লোভ এসব সিনেমা, সিরিজে মুখ্য হয়ে এসেছে। এর বাইরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বহুবার মঞ্চে ক্যামেরার সামনে ম্যাকবেথ হয়েছে। কিন্তু শেকসপিয়ারের গল্পে যে হাড় হিম করা ভয় থাকে, সেটা অনেক জায়গায় অনুপস্থিত। জোল কোয়েনের সিনেমায় সে বিষয়টি উপস্থিত এবং দারুণ স্পষ্ট। শেকসপিয়ারের গল্পের প্রতিটি উপাদান এখানে সূক্ষ্মভাবে এসেছে এবং দর্শক স্পষ্টভাবে তা অনুভব করতে পারে বলে সিনেমা থেকে চোখ সরানো অসম্ভব হয়ে ওঠে।

ট্র্যাজেডি অব ম্যাকবেথকে এভাবে উপস্থাপন করতে পারার পেছনে সিনেমার নির্মাতাদের বহুদিনের পরিশ্রম রয়েছে। সিনেমার গল্পটি মূলত জোল কোয়েন তার স্ত্রী ফ্রান্সিস ম্যাকডরম্যান্ড সাজিয়েছেন। ফ্রান্সিস গল্পটির সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত, কেননা ২০১৬ সালে স্টেজ ড্রামায় তিনি একাধারে লেডি ম্যাকবেথ এবং তিন ডাইনির একজন হিসেবে অভিনয় করেছেন। সিনেমায়ও তিনি লেডি ম্যাকবেথ। ডিজিটালি শুট করা সিনেমাটিতে ম্যাকবেথের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ড্যানজেল ওয়াশিংটন।

ড্যানজেল ফ্রান্সিসের জুটি কেমন হবে তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান ছিলেন। সিনেমার শুরুতে তাদের অনেকটা সাদামাটা লাগলেও ডানকানের মৃত্যুর পর ম্যাকবেথের ঔদ্ধত্য বাড়তে শুরু করলে ম্যাকবেথ লেডি ম্যাকবেথরূপী ড্যানজেল-ফ্রান্সিসের রসায়ন স্পষ্ট হয়। সময় থেকে গল্পের অন্যান্য উপাদান, যেমন ডাইনি বিমূর্ত হলেও নিয়তির উপস্থিতি সিনেমার সঙ্গে দর্শককে যুক্ত করে। সাদাকালো উপস্থাপনে আলো-ছায়ার ব্যবহার গল্পের ভাবকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। ব্রুনো ডেলবনেলের সিনেমাটোগ্রাফিতে কালো আকাশে টিমিটিমে তারা হয়তো অনেককে সিন সিটির কথা মনে করিয়ে দেবে। আবার ঘুমের মধ্যে লেডি ম্যাকবেথের চলা এবং হাত ধোয়ার দৃশ্য গথিক হররে নিয়ে যাবে। কার্টার বারওয়েলের আবহ সংগীতও প্রশংসার দাবিদার।

ড্যানজেলের তারকা খ্যাতির জন্য সিনেমাটি দেখতে গিয়ে সাধারণভাবে সবার দৃষ্টি হয়তো তার ওপর পড়বে কিন্তু দ্য ট্র্যাজেডি অব ম্যাকবেথ মূলত বহু উপাদানের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমা। অরসন ওয়েলসের ম্যাকবেথের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকলেও কোয়েন এখানে নিজস্ব একটা ছাপ রেখেছেন। ম্যাকবেথ পাঠের পাশাপাশি যারা এর নানা রূপান্তরের সঙ্গে পরিচিত, জোল কোয়েন তাদের এক নতুন স্বাদের ম্যাকবেথ উপহার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তুলনামূলক স্বল্প বাজেটে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ভালো সিনেমার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।

 

হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন