পাবনায় এবার কন্দ (মুড়িকাটা) পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিকাংশ চাষী পেঁয়াজ ঘরে তুলেছেন। তবে পেঁয়াজের দাম আশানুরূপ না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি চাষীদের। কৃষি বিভাগের দাবি, বর্তমান বাজারদরে কৃষকের কোনো লোকসান হবে না।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এবারো জেলার চাষীরা লাভের আশায় অনাবাদি জমি আবাদের উপযুক্ত করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে বাজারে দাম কম থাকায় তাদের লোকসান গুনতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ মৌসুমে পাবনায় ৯ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫২১ টন। আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।
পেঁয়াজচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে কন্দ পেঁয়াজ চরাঞ্চল বা উঁচু জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ও জানুয়ারির শুরুতে জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে তা পরিপাটি করে জেলা ও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। চারা পেঁয়াজ ওঠার তিন মাস আগে বাজারের চাহিদা মেটায় এ কন্দ পেঁয়াজ।
পেঁয়াজের চারণভূমি হিসেবে খ্যাত সুজানগর পৌরহাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন খয়রান গ্রামের চাষী আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাতে কিছুটা লোকসান গুনতে হচ্ছে। মণপ্রতি সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে অন্তত খরচের টাকা উঠত।
পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, এ জেলার পেঁয়াজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান। তবে কন্দ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না বলে কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলেই স্থানীয় বাজারে দ্রুত বিক্রি করে দেন।
পাবনা সদর উপজেলার পুষ্পপাড়া হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা আরমান আলী বলেন, গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল। এ আশায় এবার পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। হাটে পেঁয়াজ এনে হতাশ। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারদর কমিয়ে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করছেন।
তিনি আরো জানান, গত বছর এ সময় এক মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কিন্তু এ বছর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। তাই আশানুরূপ দাম না পেলেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
আড়তদাররা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। তারা জানান, প্রথম দিকে চাষীরা কিছুটা লাভবান হলেও ক্রমেই দাম কমছে। এভাবে দাম কমতে থাকলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
পেঁয়াজ চাষীরা বলছেন শ্রমিক, জমি চাষ ও সার-কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এতে তাদের লাভ কম হচ্ছে। অনেক চাষী পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর জন্য কৃষিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের দাবি, দাম না বাড়লে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
অনেক চাষী অভিযোগ করে জানান, পেঁয়াজের বেপারিরা তাদের ঠকাচ্ছেন। বেপারিরা দাম করে পেঁয়াজ কেনার পরও আড়তে নিয়ে দাম কম দেন। প্রতিবাদ করলে তারা মারমুখী আচরণ করেন। মূলকাটা পেঁয়াজ ক্ষেতে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ দুঃখ করে জানান, দাম একটু বাড়লেই কথা ওঠে। কিন্তু দাম কমে গেলে কেউ চাষীদের খবর নেন না।
সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম জানান, গত বছর উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এবার ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন বেশি হয়েছে। দাম একটু কম পেলেও ফলনে পুষিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের। বর্তমান বাজার দরে কৃষকের লোকসান হবে না।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় দাম কম হলেও কৃষক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন না বলে তিনি মনে করেন।