দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করেন। যদিও এটা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর করার কথা। এজন্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ব্রোকার মনে করা হয়। তাই ব্রোকারদের করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি। তিনি গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জে বেক্সিমকো গ্রীন-সুকুক আল ইসতিসনার লেনদেন চালু উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া। সমাপনী বক্তব্য রাখেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসূর রহমান। লেনদেন শুরুর আগে সুকুকটির তালিকাভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ডিএসইর সিনিয়র ম্যানেজার মো. রবিউল ইসলাম ও বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও. কে. চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের দুটি বড় দুর্বলতা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে কাঠামোগত। আমারা অনেকাংশেই ইকুইটিনির্ভর। এটি একটি বড় দুর্বলতা। তবে বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ডেট সিকিউরিটিজ হিসেবে বেক্সিমকো সুকুকের লেনদেন শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে ডেট সিকিউরিটিজের বাজার আরো বড় হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইকুইটি ও ডেট মার্কেটের আকার সমান। কোথাও এটি ইকুইটির চেয়েও বড়।
প্রাতিষ্ঠানিকের তুলনায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আধিক্যকে পুঁজিবাজারের দ্বিতীয় বড় দুর্বলতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেশি। পরিণত বাজারে প্রাতিষ্ঠানিকদের লেনদেনের পরিমাণ বেশি হয় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কম হয়। এমনকি সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরাসরি না করে ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। এ কারণে আমাদের পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন বেশি দেখা যায়।
সুকুকের সাবস্ক্রিপশনের সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, শরিয়াহভিত্তিক এ বন্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাইনি। তবে প্রাতিষ্ঠানিকদের অংশগ্রহণ ভালো ছিল। সুকুকের বিষয়টি ভালোভাবে তুলে ধরতে না পারার কারণেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে আমার মনে হয়। অথচ আমানতকারীদের জন্য সুকুকটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ সময় তিনি ভবিষ্যতে ডেট সিকিউরিটিজের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতের বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, নতুন নতুন পণ্য আনার মাধ্যমে বাজারকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে কমিশন। বেক্সিমকোর সুকুকের মাধ্যমে সেই চেষ্টা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। ভবিষ্যতে আরো বেশকিছু পণ্য আসতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও সুকুক বন্ড ইস্যুর কাজ চলছে। এভাবেই পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান আরো বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বেসরকারি খাতের প্রথম কোম্পানি। যারা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে আমদানি-রফতানির লাইসেন্স পেয়েছে। যোগ্য নেতৃত্ব ও করপোরেট সংস্কৃতিকে ধারণ করে বেক্সিমকো বাজারে নতুন নতুন উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধান সালমান এফ রহমান একজন উদ্ভাবনী ও সাহসী ব্যবসায়ী। আমরা বারবার যে কথাটা বলছি যে আমাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে উদ্ভাবনী হতে হবে।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া স্বাগত বক্তব্যে বলেন, সুকুকটি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বেক্সিমকো লিমিটেড এরই মধ্যে ডিএসই, সিএসইর পাশাপাশি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তাই কোম্পানিটির করপোরেট এক্সপোজার সামগ্রিকভাবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বেক্সিমকোর সুকুকের তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আজকের দিনটি দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রাণ। তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের প্রধান কাজ। কিছু কিছু ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের তহবিল তছরুপ করেছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিএসইসি ও ডিএসই একসঙ্গে কাজ করছে।
ডিএসইর পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সুকুকের লেনদেন চালু উপলক্ষে গতকাল একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।