বহুমুখী প্রতিবন্ধকতায় হুমকিতে ভারতের চিনি রফতানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

সরবরাহ চেইনে সংকটের কারণে চলতি বছর ভারতের চিনি রফতানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্থানীয় বাজারদরের ব্যবধানের কারণে মিলগুলো রফতানিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখী জাহাজীকরণ ব্যয় সংকটকে আরো তীব্র করে তুলেছে।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি উৎপাদক দেশ। দেশটির চিনি শিল্প খাতে বড় প্রতিবন্ধকতার নাম রেলওয়ে ওয়াগনস্বল্পতা। মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় কয়লা সরবরাহসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে চাহিদা বেশি থাকায় চিনি রফতানিকারকরা ওয়াগন পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে ট্রাকে করেই বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হচ্ছে মিলে উৎপাদিত চিনি। সুযোগে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ট্রাকের ভাড়া। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রাকের ভাড়া প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। ডিজেলের আকাশছোঁয়া দাম, কিছু বন্দরে সীমিত মজুদ সক্ষমতাসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের অক্টোবরে চিনি বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মৌসুম শেষ হবে। চলতি মৌসুমে ৬০ লাখ টন চিনি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে ভারত। কিন্তু বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলোর অবসান না ঘটলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা দেশটির রফতানিকারকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মৌসুমের এখন পর্যন্ত ভারতের চিনিকলগুলো ৪০ লাখ টন চিনি রফতানির চুক্তি করেছে। কিন্তু পরিবহন সংকট অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিলমালিকরা ক্রেতাদের কাছে চিনি সরবরাহ করতে পারবেন না। যদিও অতিবৃষ্টির কারণে গত বছরের নভেম্বর থেকেই চিনি রফতানিতে বিলম্ব শুরু হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে চিনির বৈশ্বিক দাম কমে ছয় মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে। কিন্তু ভারতের রফতানি বিলম্ব বিক্রি কমায় বৈশ্বিক দাম আবারো বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে পণ্যটির বৈশ্বিক দাম কমায় নতুন করে রফতানি চুক্তি করছেন না ভারতের চিনি রফতানিকারকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি পাউন্ড চিনির দাম ২০ থেকে সাড়ে ২০ পাউন্ড থাকলে তা রফতানিকারকদের জন্য লাভজনক। কিন্তু বর্তমানে প্রতি পাউন্ড চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর ১৮ সেন্টে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে স্থানীয় আন্তর্জাতিক বাজারদরের তারতম্যের কারণেও রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অল ইন্ডিয়া সুগার ট্রেডারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রবি গুপ্ত বলেন, চিনিকলগুলো স্থানীয় বাজারে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছে। বর্তমান বাজারদরের কারণে ভারতের চিনি রফতানি কিছু নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

ডিলারদের দেয়া তথ্য বলছে, মিলমালিকরা স্থানীয় বাজারে প্রতি টন চিনি ৩২ হাজার রুপিতে বিক্রি করছেন। অথচ রফতানির ক্ষেত্রে ক্রেতারা টনপ্রতি ৩০ হাজার ডলারের বেশি দামে চিনি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি বি তোম্পাড়ে বলেন, গত মৌসুমের আগে ভারতে স্থানীয় রফতানি চাহিদা মিটিয়ে চিনির উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু গত মৌসুমে রেকর্ড রফতানির কারণে উদ্বৃত্ত কমে গেছে। ওই সময় ৭২ লাখ টন চিনি রফতানি করা হয়েছিল। সরকারি প্রণোদনার সুবিধা থাকায় রফতানিতে এমন প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়।

রবি গুপ্ত বলেন, এখন পর্যন্ত মহারাষ্ট্র কর্ণাটকের মিলগুলোই বেশির ভাগ চিনি রফতানি চুক্তি করেছে। তবে উত্তর প্রদেশের মিলমালিকরা স্থানীয় বাজার থেকে বেশি লাভবান হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি করেননি। এছাড়া বর্তমানে নতুন করে কোনো চুক্তিও স্বাক্ষর হচ্ছে না। মিলগুলো নতুন চুক্তির পরিবর্তে বিদ্যমান চুক্তি বাস্তবায়নেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন