মহামারী কী ফ্যাশন ও পোশাকের পরিবর্তন আনছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বেশ ভালোভাবেই বিশ্ববাজারে নাড়া দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আমাদের ছকে বাঁধা জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে এই ভাইরাস। মহামারীর সময়ে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও। গ্রাহকের চাহিদা আর চিন্তার পরিবর্তনের সাথে পোশাকে পরিবর্তন এসেছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে বলে মনে করেন অনেকেই। প্লেগ মহামারীর সময়ে পোশাকের নকশায় বেশ পরিবর্তন এসেছিল। ২০২০ সালে দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকতে হয়েছে বিশ্বকে। পরবর্তী বছরে লকডাউনের পুনরাবৃত্তি হলেও স্থায়িত্ব কিছুটা কম ছিল। চলতি বছরেও অনেক দেশে এরই মধ্যে লকডাউন শুরু হয়েছে আর অনেক দেশ সেই পথে হাঁটছে।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের স্কুল অফ ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইলের ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির প্রভাষক ডক্টর কেট সালা মনে করেন, দীর্ঘ লকডাউনে ঘরে থাকায় মানুষ এখন আরামদায়ক পোশাক পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যার ফলে পোশাকের ধারায় পরিবর্তন আসতে পারে। শুধু তাই নয় মানুষ এখন ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে পছন্দ করে, ফলে জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন শপিং।

লকডাউন চলাকালে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। দীর্ঘদিন ঘরে থাকার কারণে ক্রেতারা পোশাক কেনা থেকেও বিরত থাকে। বিক্রি না থাকায় লোকসান কমাতে উত্পাদন বন্ধ করে দেয় অনেক পোশাক কারখানা। সাধারণত, বিশ্বব্যাপী পরবর্তী মৌসুমের পোশাক তৈরি করা হয় চলতি মৌসুমে। লোকসান এড়াতে বর্তমানে বিশ্ববাজারে অন-ডিমান্ড ম্যানুফাকচারিং প্রসেস গুরুত্ব পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মৌসুমভিত্তিক উত্পাদন না করে বরং দরকার বুঝে পণ্য উত্পাদন করা হয়। তবে দক্ষ লোকবল ও প্রযুক্তির অভাবে কার্যকর হয়নি এ পদ্ধতি।  

লকডাউন চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে অনলাইনে ব্যবসাও বেশ গুরুত্ব পায়। অনলাইন বা ই-কমার্স এর ব্যাপক বিকাশ হয় এই সময়ে। করোনার আগে অনেক গ্রাহক অনলাইনে কেনাকাটা করতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। আবার এসময়ে অনেক বিক্রেতা অনলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে যাওয়ারও সুযোগ পান। ২০২০ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই অনলাইন কেনাকাটা ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি পায়, ২০২১ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। 

আমাদের দেশের অনেকেই বিশেষ করে নারীরা করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে অনলাইনে ব্যবসা করেছেন। নিজের ডিজাইন করা পোশাক দিয়ে তারা পরিচিতি তো পেয়েছেনই তার সাথে দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

মহামারীতে পোশাকের ধারা পরিবর্তন নতুন কোন চিত্র নয়। সামাজিক দূরত্ব মহামারীকালে সব সময় গুরুত্ব পায়। ১৬৬৫ সালের ‘গ্রেট প্লেগ’-এর সময় চিকিত্সকরা রোগীর সাথে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিশেষ পোশাক পরতেন। সেই সময়ে মাস্ক, লম্বা কোট এবং হাতে গ্লাভস পরতেন চিকিত্সকেরা। তারা বিশ্বাস করতেন এধরনের পোশাক রোগী থেকে তাদের দূরুত্ব তৈরি করবে এবং বাতাসে রোগ ছড়ালেও তারা আক্রান্ত হবে না। 

সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি তখন সাধারণ জনগণও মেনে চলতেন। পুরুষেরাও চিকিৎসকদের মতো লং কোট, টুপি, গ্লাভস ও মাস্ক পরতেন। নারীরা সে সময়ে নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য লম্বা গাউন পরতেন যেগুলো বেশ জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকত আর অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে দিত। গাউন ছাড়াও নারীরা হুপ স্কার্ট পরতেন। ১৯ শতকের দিকে গাউন আর হুপ স্কার্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আজো নারীদের মাঝে এ পোশাকগুলো বেশ জনপ্রিয়।  

পোশাকের ধরণ পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়ে প্রফেসর কেট সালা জানান, মানুষ দীর্ঘ দিন ঘরে থেকেছে তাই তারা এখন আরামদায়ক পোশাক পরতেই বেশি ভালোবাসে। হয়তো কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে অনেক কর্মী আঁঁটোসাটো পোশাকের পরিবর্তে আরামদায়ক পোশাকের উপরই গুরুত্ব দিবেন।   

সম্প্রতি জনপ্রিয় গ্লোবাল ব্র্যান্ড লুলুলেমন অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি বাজারে ২০ হাজার ক্রেতার উপর একটি জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, ৮১ শতাংশ ক্রেতা জানান লকডাউনে বাসায় বসে অফিসের কাজ করতে গিয়ে তারা বুঝতে পেরেছে আরামদায়ক পোশাক পরে কাজ করতে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য এবং এর ফলে তারা আরো ভাল কাজ করতে পারে। বর্তমানে ডেনিম স্কার্ট, জগার্স, স্কার্ফ এবং ফুলহাতা পোশাকের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় এসব এখন জনপ্রিয় ফ্যাশন পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

করোনাকাল চলছে, এর থেকে আমাদের পুরোপুরি মুক্তি কবে জানি না। তবে এ সময়ে মাস্ক আমাদের নিত্যসঙ্গী। হাল ফ্যাশনে মাস্কের চাহিদা তুঙ্গে। এখন পোশাকের সাথে মিলিয়ে মাস্ক বিক্রি করছে অনেক ফ্যাশন হাউজ। নানা বাহারের নানা রঙের মাস্ক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

মানুষ এখন ভবিষ্যত্ নিয়ে সচেতন, তাই বাজেটের মধ্যে পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী। নিজেদের টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই বর্তমানে বাজেট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করেন অনেক ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ। পোশাক এবং ফ্যাশন এমন একটি বিষয় যেটি কখনো বিলীন হবে না বরং পরিবর্তন নিয়ে সময়ের সঙ্গে টিকে থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন