টানা পাঁচ কার্যদিবস ধরে ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। এ সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৯৮ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট। গতকাল ডিএসইতে সূচকের পাশাপাশি দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক ও লেনদেন বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত মাসে পুঁজিবাজারে দর সংশোধনের পর নতুন বছরের শুরুতে বিনিয়োগকারীরা খাতভিত্তিক বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। এতে সূচকের পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। ওমিক্রনের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা শঙ্কিত করলে বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেনের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। মাঝে কিছুটা উত্থান-পতন দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত গতকাল দিনশেষে প্রায় ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৯৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ৮৯৩ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে রবি আজিয়াটা, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) ও ফরচুন সুজের শেয়ার।
ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে প্রায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৪৫৬ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ৫ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ৫৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৫৭১ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ২১৮টির, কমেছে ১২১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৯টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বিবিধ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ২০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে নেতিবাচক রিটার্নের শীর্ষে ছিল জীবন বীমা খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসসি, ফরচুন সুজ, পাওয়ার গ্রিড, সাইফ পাওয়ারটেক, জিএসপি ফাইন্যান্স, অ্যাকটিভ ফাইন, জিপিএইচ ইস্পাত, তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম ও পেনিনসুলা চিটাগং।
গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বিএসসি, রবি আজিয়াটা, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম, মেট্রো স্পিনিং, ফু-ওয়াং ফুড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ম্যাকসন্স স্পিনিং ও বিবিএস।
অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর কমার শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস।
অন্যদিকে সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১০৩ পয়েন্ট বেড়ে ১২ হাজার ২০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১২ হাজার ১০৪ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২১৫টির, কমেছে ৬৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৫টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
