বিএসইসির চিঠি

এক মাসের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে নিরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিমিউচুয়ালাইজেশন (ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক্করণ) স্কিম বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিধিমালা অনুসারে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখার জন্য ৩০ দিনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স অডিটর নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক্ষেত্রে নিরীক্ষক নিয়োগ শর্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। গত জানুয়ারি দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে -সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. রায়হান কবীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্দেশ্য প্রাথমিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিনা বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের .. ধারা অনুসারে এসব উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে সেটি উল্লেখ করতে হবে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের আলোচ্য ধারা অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক আড়াই হাজার কোটি টাকা গড় লেনদেন, বাজারের মোট বিনিয়োগের তিন-চতুর্থাংশ যাতে স্থানীয় বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসে সেটি নিশ্চিত করা, মোট বাজার মূলধনের ৩০ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত করা, সরকারি সিকিউরিটিজকে লেনদেনের আওতায় আনাসহ বন্ড মার্কেটের গভীরতা তারল্য বৃদ্ধি এবং  ইনডেক্স ফিউচার, ইটিএফ, সুকুক ডেরিভেটিভসের মতো নতুন পণ্য তালিকাভুক্ত করার কথা ছিল। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো, নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাণিজ্যিক কার্যক্রম আলাদা করা, করপোরেট সুশাসন বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিশ্চিত করার কথা ছিল দুই স্টক এক্সচেঞ্জের। গত বছরের মধ্যেই ডিমিউচুয়ালাইজেশনের এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। যদিও দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম অনুসারে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল। যদিও এখনো পর্যন্ত এক্সচেঞ্জ দুটি তা করতে পারেনি। এক্ষেত্রে সেলফ লিস্টিং কিংবা ক্রস লিস্টিং প্রক্রিয়ার বিষয়ে বছরের ১০ জানুয়ারির মধ্যে একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে কমিশনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া চিঠিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অতিসত্বর চাকরি বিধিমালা জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির বিষয়ে একটি সময়সীমা নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি সিকিউরিটিজসহ বন্ডের লেনদেন গতিশীল করতে একটি ইল্ডভিত্তিক প্লাটফর্ম চালুর জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ডিএসই সিএসইর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। বৈঠকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে কমিশনের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কমিশনের পর্যবেক্ষণে আরো উঠে এসেছে যে দৈনন্দিন আর্থিক ব্যবস্থাপনাগত বিভিন্ন ইস্যুতে এক্সচেঞ্জের পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা ডিমিউচুয়ালাইজেশনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিধিমালা অনুসারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে কমপ্লায়েন্স অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৩ সালে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণের মাধ্যমে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়। ফলে এক্সচেঞ্জের পর্ষদে শেয়ারধারী পরিচালকদের প্রাধান্য লোপ পায়। এর পরিবর্তে স্বতন্ত্র পরিচালকরা এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে আসে। কিন্তু পরিবর্তনও অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পরও এখনো পর্যন্ত এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এর কার্যক্রমে তাদের স্বাতন্ত্র্য দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। ফলে এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রেই শেয়ারধারী পরিচালকদের দ্বারস্থ হতে হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন