হালকা প্রকৌশল খাত

জামানত ছাড়া ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা

মেসবাহুল হক

দেশের বেকার অর্ধবেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য জামানত ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। বঙ্গবন্ধু যুবঋণ নীতিমালার আওতায় বেকার যুবসমাজ শতাংশ সরল সুদে পাঁচ বছর মেয়াদে সরকারি ব্যাংকের ঋণ পাচ্ছে। এবার একই নীতিমালার আওতায় হালকা প্রকৌশল (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা, মূলধন জোগান অনুকূল নীতিসহায়তা পেলে খাতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধিতে খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। খাতটির উন্নয়নে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিয়মিত মনিটরিংও করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার স্বল্পব্যয়ী তহবিল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। লক্ষ্যে গত ২৯ নভেম্বর শিল্প সচিবের সভাপতিত্বে হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রম মনিটরিং-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খাতকে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন করে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থান নিশ্চিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে চায় সরকার। এজন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৪ দশমিক থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্য অর্জনে আমদানিনির্ভর পণ্য উৎপাদন, ভারী শিল্পের লিংকেজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যতম সহায়ক শিল্প হিসেবে অপার সম্ভাবনাময় হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতকে প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করেন।

বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বণিক বার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু যুবঋণ নীতিমালার আওতায় জামানত ছাড়াই ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। কিন্তু অর্থ দিয়ে হালকা প্রকৌশল শিল্প স্থাপন সম্ভব নয়। তাই আমরা বঙ্গবন্ধু যুবঋণ নীতিমালার অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত রেখে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ২০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছি। সহজ শর্তে উদ্যোক্তারা ঋণ পেলে খাতের অপার সম্ভাবনার কিছুটা হলেও কাজে আসবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব হাতে পেয়েছেন উল্লেখ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মসংস্থান ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত  নেয়া হবে।

এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, হালকা প্রকৌশল খাতের জন্য স্বল্পব্যয়ী তহবিল নিশ্চিত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে একটি তহবিল গঠনে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) যেসব জেলায় বিসিক শিল্পনগরীতে বরাদ্দযোগ্য প্লট আছে সেসব জেলায়; বিশেষ করে গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ শ্রীমঙ্গল শিল্পনগরীতে খাতের উদ্যোক্তাদের প্লট গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়। উদ্দেশ্য, দেশের সব এলাকায় শিল্পায়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। বিসিক কর্তৃক খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিল্প পার্ক স্থাপন-সংক্রান্ত সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর প্রভাবে দেশের সিংহভাগ শিল্পপণ্য রফতানি মন্দার মুখে পড়লেও ব্যতিক্রম ছিল প্রকৌশল খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এসব পণ্য রফতানিতে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯২ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের প্রকৌশল পণ্য রফতানি করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রফতানি করা হয়েছিল ২৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর এসব পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছিল ৫২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছর খাত থেকে ৬৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। 

প্রকৌশল খাতের রফতানি বৃদ্ধি, বিশেষ করে হালকা প্রকৌশল খাতের প্রবৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের দেয়া নগদ প্রণোদনার কল্যাণেই হালকা প্রকৌশল খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ বর্তমানে যেসব প্রকৌশল পণ্য রফতানি করছে তার মধ্যে আছে আয়রন-স্টিল, তামার তার, স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি সামগ্রী, প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক পণ্য, বাইসাইকেল অন্যান্য পণ্য। এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, চীন, মিয়ানমার, ইতালি, পর্তুগাল, কোরিয়া, শাদ, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, কুয়েত, কেনিয়া, নেপাল, তিমুর, ইয়েমেন, ফ্রান্স, হংকং, শ্রীলংকা, বেলজিয়াম, বুরুন্ডি, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, জার্মানি, আলজেরিয়া, মিসর, স্পেন, হন্ডুরাস, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডস চিলিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন