৮ ব্যাংকের বন্ডে সুদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার বিএসইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

তফসিলি ব্যাংকের পারপেচুয়াল বা বেমেয়াদি বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সুদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করেছে বিএসইসি। গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ব্যাংকের পারপেচুয়াল বন্ডের সুদ প্রদানের বাধ্যবাধকতার শর্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ কমিশন সভার মাধ্যমে শর্ত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বিএসইসির সিদ্ধান্ত গতকালই চিঠির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর টায়ার- মূলধন ভিত্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি বিবেচনা করে কমিশন পারপেচুয়াল বন্ড ইসু্যুকারী ব্যাংকগুলোকে বন্ডহোল্ডারদের অর্থ পরিশোধ বা বিতরণ বাতিলের বিষয়টি সর্বদা ব্যাংকগুলোর বিবেচনাধীন থাকবে না’— শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিএসইসির চিঠিতে।

কমিশনের চিঠির অনুলিপি পারপেচুয়াল বন্ডের অনুমোদন পাওয়া পূবালী, ওয়ান, প্রিমিয়ার, স্ট্যান্ডার্ড, এক্সিম, যমুনা, এমটিবি এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে পারপেচুয়াল বন্ডের বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ প্রদান করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে শর্ত দিয়েছিল বিএসইসি। কিন্তু ব্যাংকগুলো ব্যাসেল- পরিপালনে অতিরিক্ত টায়ার- মূলধন ভিত্তির জন্য পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যু করে থাকে। এক্ষেত্রে টায়ার- মূলধন ভিত্তির সংজ্ঞায় বাধ্যতামূলক সুদ পরিশোধসহ ঋণপত্রের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে সুদ পরিশোধসংক্রান্ত কমিশনের বাধ্যবাধকতা আরোপের ফলে পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিলকে অতিরিক্ত টায়ার- মূলধন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে না বলে ব্যাংকগুলোকে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়ে। তবে সুদ প্রদানের বাধ্যবাধকতার শর্ত প্রত্যাহারের কারণে ব্যাংকগুলোর পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে টায়ার- মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করার পথ সুগম হয়েছে।

যে ব্যাংকের পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে সুদ প্রদানের বাধ্যবাধকতার শর্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের মধ্যে পূবালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ৫০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

ওয়ান ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ২০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

প্রিমিয়ার ব্যাংক বিএসইসির কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকার পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ২০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংককে ৫০০ কোটি টাকার মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ডের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আর ৫০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

এক্সিম ব্যাংক কমিশনের কাছ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে এবং বাকি ৬০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

যমুনা ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকার পারপেচুয়াল বন্ডের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ৩৬০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আর বাকি ৪০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকার পারপেচুয়াল বন্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আর বাকি ৪০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

এবি ব্যাংকের ৬০০ কোটি টাকার পারপেচুয়াল বন্ড অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ৫৪০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট বাকি ৬০ কোটি টাকা পাবলিক অফারের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন