মার্জিন ঋণ নীতিমালায় পরিবর্তন

ক্যাটাগরি পরিবর্তনের ৭ দিন পরই ঋণ পাবেন বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন ঋণ নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এখন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন হওয়ার সাতদিন পর থেকেই সেই শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য মার্জিন ঋণ পাবেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৮০৪তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কমিশন সভাশেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জেড ক্যাটাগরির সিকিউরিটি ছাড়া বিদ্যমান কোনো তালিকাভুক্ত সিকিউরিটির ক্যাটাগরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। তবে এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটি জেড ক্যাটাগরি থেকে উচ্চতর কোনো ক্যাটাগরিতে উন্নীত হলে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের দিন থেকে প্রথম দিন কার্যদিবস পর্যন্ত এটি কেনার জন্য মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে না। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত জেড ক্যাটাগরির কোনো সিকিউরিটিজ কেনার জন্য মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে না। এছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত সিকিউরিটি কেনার ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথম ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত কোনো মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে না।

কমিশন সভার সিদ্ধান্তের পরই গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে -সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। অবিলম্বে এটি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর জারি করা -সংক্রান্ত কমিশনের আগের আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। আগের আদেশ অনুসারে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটির ক্যাটাগরি পরিবর্তন হওয়ার পর প্রথম লেনদেনের দিন থেকে ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত মার্জিন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ ছিল।

পুুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বছর থেকেই মার্জিন ঋণ নীতিমালা বেশকিছু পরিবর্তন ছাড় দিয়েছে বিএসইসি। সর্বশেষ বছরের ১২ আগস্ট জারি করা আদেশে সূচকের সঙ্গে মার্জিন ঋণ প্রদানের নীতিমালা সমন্বয় করা হয়েছে। আদেশ অনুসারে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স হাজার পয়েন্টের নিচে থাকলে বিনিয়োগকারীরা : দশমিক ৮০ অনুপাতে মার্জিন ঋণ পাবেন। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারীর যত টাকার বিনিয়োগ রয়েছে তার ৮০ শতাংশ অর্থ তিনি মার্জিন ঋণ হিসেবে পাবেন। আর ডিএসইএক্স সূচক হাজার বা এর বেশি হলে সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা : দশমিক ৫০ অনুপাতে মার্জিন পাবেন। এর মানে মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের অর্ধেক মার্জিন ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে।

এর আগে বছরের এপ্রিল জারি করা নির্দেশনা অনুসারে, ডিএসইএক্স সূচক হাজারের নিচে থাকলে : দশমিক ৮০ অনুপাতে এবং সূচক হাজার বা এর বেশি হলে : দশমিক ৫০ অনুপাতে মার্জিন ঋণ প্রদানের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সূচক বাড়ার সঙ্গে আনুপাতিক হারে মার্জিন ঋণের হার কমার শর্তারোপ করে নির্দেশনা জারি করেছিল কমিশন। নির্দেশনা অনুসারে ডিএসইএক্স সূচক হাজারের নিচে থাকলে গ্রাহকদের :, সূচক ৪০০১ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত থাকলে : দশমিক ৭৫, ৫০০১ থেকে ৬০০০ থাকলে : দশমিক ৫০, ডিএসইএক্স হাজার বা তার বেশি হলে : দশমিক ২৫ অনুপাতে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। গত বছরের অক্টোবর থেকে আদেশ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। অবশ্য এর এক সপ্তাহের মধ্যে মার্জিন ঋণ প্রদান নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর জারি করা পরিবর্তিত নীতিমালা অনুসারে ডিএসইএক্স সূচক হাজারের নিচে থাকলে গ্রাহকদের : দশমিক ৭৫, সূচক ৪০০১ থেকে ৭০০০ পর্যন্ত থাকলে : দশমিক ৫০, এবং সূচক ৭০০১ বা এর বেশি হলে : দশমিক ২৫ অনুপাতে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। বছরের জানুয়ারি থেকে আদেশ কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল সে সময়। যদিও বছরের এপ্রিল জারি করা আদেশের মাধ্যমে গত বছরের আদেশটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। আর এপ্রিল জারি করা আদেশ বছরের ১২ আগস্ট জারি করা আদেশের মাধ্যমে রহিত হয়ে গেছে।

গতকালের বাজার পরিস্থিতি: চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই বড় পতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। গতকাল ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে শতাংশের বেশি। অবশ্য এদিন এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক কমার বিপরীতে দৈনিক লেনদেন বেড়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর মিনিট পর্যন্ত সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এরপর থেকেই বিক্রয় চাপের কারণে পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। শেষ পর্যন্ত গতকাল দিনশেষে ৭৩ পয়েন্ট কমে হাজার ৬৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল হাজার ৭০৩ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি আজিয়াটা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে ১৫ পয়েন্ট কমে হাজার ৪০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ৪২৪ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ২৪ পয়েন্ট কমে গতকাল হাজার ৪৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিনশেষে যা ছিল হাজার ৫১২ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৮০১ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ৩০০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩১টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন