রাশিয়া থেকে কেনা হচ্ছে ৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার

মেসবাহুল হক

শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতে ফোর্সেস গোল-২০৩০- বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সক্ষমতা আরো বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাশিয়া থেকে কেনা হচ্ছে আটটি এমআই-২৮এনই অ্যাটাক হেলিকপ্টার। এসব হেলিকপ্টার কিনতে ব্যয় হবে প্রায় হাজার ১০০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টার কেনার বিষয়ে প্রাক-অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য চলতি আগামী অর্থবছরে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকার) ব্যবস্থাপনায় বিক্রয়কারী দেশ রাশিয়া সরকার অথবা দেশটির মনোনীত সংস্থার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে আটটি এমআই-২৮এনই অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক হাজার ১০০ কোটি টাকা।

প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিটি কোটি ৩৫ লাখ ইউরো হিসেবে আটটি হেলিকপ্টার কেনায় ব্যয় হবে ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ইউরো অর্থাৎ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া হেলিকপ্টার পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণে বৈদেশিক স্থানীয় প্রশিক্ষণ, বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন অন্যান্য ব্যয় বাবদ বাকি অর্থ খরচ হবে।

হেলিকপ্টার কেনায় রাশিয়া সরকার অথবা রাশিয়া সরকারের মনোনীত সংস্থার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী বিমান সদরের একজন এয়ার ভাইস মার্শালের সভাপতিত্বে ১২ সদস্যের একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, এসএফসি (ডিপি) বিমান সদরের দুজন প্রতিনিধি।

হেলিকপ্টার কেনায় কমিটি খসড়া চুক্তি নিরীক্ষণ, প্রস্তুতকারী দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে জিটুজি পদ্ধতিতে কোনো বিদেশী সরকার বা অন্য দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের প্রস্তাবিত দ্রব্য কিংবা সেবা কেনা সমীচীন কিনা তা যাচাই করবে। বিক্রয়কারী দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হবে। প্রস্তুতকৃত খসড়া চুক্তি নিরীক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন চূড়ান্ত করা হবে। অর্থ পরিশোধের শর্তসহ ক্রয়সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় কমিটি চূড়ান্ত করবে।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, হেলিকপ্টার কেনা বাবদ ব্যয় আনুমানিক হাজার ১০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর থোক বরাদ্দ থেকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরসহ পরবর্তী পাঁচ অর্থবছর অথবা আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে পরবর্তী পাঁচ অর্থবছরে পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে এলসির মাধ্যমে অথবা সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের অধীনে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।

জানা গেছে, এমআই-২৮এনই অ্যাটাক হেলিকপ্টার যেকোনো আবহাওয়ায় শত্রুর ওপর হামলা চালাতে পারে। রাতে অভিযান পরিচালনা করতে এর রয়েছে অত্যাধুনিক নাইট ভিশন সিস্টেম। হেলিকপ্টার এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পাশাপাশি শত্রুর জনবল সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। হেলিকপ্টারের রয়েছে সশস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা।

প্রস্তাবে বলা হয়, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পেশাদারিত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর ভাণ্ডারে জঙ্গি বিমানসহ প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে সর্বাধুনিক মডেলের পরিবহন পরিবহন প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ, বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার, উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আবহাওয়া রাডার, স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ভারী মাঝারি মানের মিসাইল গোলাবারুদ সামগ্রী। এগুলোর অন্তর্ভুক্তি বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন