লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধান

পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন বিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ত। এসব জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হয়। লবণাক্ত জমিতে আরো বেশি শস্য আবাদের জন্য প্রয়োজন লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন। আর তার জন্য প্রয়োজন উন্নত গবেষণা। অঞ্চলের আবাদ উপযোগী লবণাক্ততা জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের ফলে লবণাক্ততা জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধান গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে গতকাল বিনার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী . মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি ময়মনসিংহে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিনার মহাপরিচালক . মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান . শেখ মো. বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুত্ফুল হাসান, বাংলাদেশে ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) মহাপরিচালক . শাহজাহান কবীর প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।

. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে ভবিষ্যতে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা লবণাক্ত, হাওরসহ প্রতিকূল এলাকায় বছরে দু-তিনটি ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ জিনোম উন্মোচনের ফলে লবণাক্ততা জলমগ্নতাসহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন সম্প্রসারণ সহজতর হবে।

জানা গেছে, বিনা বাকৃবির যৌথ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে অর্ধলক্ষাধিক মিউট্যান্ট সৃষ্টি করে তা থেকে নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত জেনারেশনে তিনটি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো প্যারেন্ট অপেক্ষা উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং মাত্রার লবণাক্ততা ১৫ দিন জলমগ্নতাসহিষ্ণু। গবেষণালব্ধ তত্ত্ব-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিনা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম লবণ জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে। যার মাধ্যমে লবণাক্ততা জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধান গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। বিনা প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই আরোপিত মিউটেশনের মাধ্যমে ফসলের নানা জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব গবেষণায় আরোপিত মিউটেশনের প্রভাবে ফসলের ফেনোটাইপের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখে উন্নত জাত শনাক্ত করা হতো কিন্তু জিনোমের কোথায় ডিএনএ বিন্যাসের পরিবর্তনের জন্য এমন কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হলো তার ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হতো না। লক্ষ্যে ২০১৯ সালে গবেষণায় প্যারেন্ট নির্বাচিত তিনটি মিউট্যান্ট ধানের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হয়, যা বাংলাদেশে প্রথম।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আকস্মিক বন্যা লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকরী উপায় হচ্ছে লবণাক্ততা জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন। লক্ষ্যে বিনার . মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে চলেছেন।

এদিকে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী . মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ চাল আমদানিতে দ্বিতীয় নয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৮ ডিসেম্ব্বর ২০২১ পর্যন্ত মাত্র ১৫ লাখ টন চাল দেশে আমদানি হয়েছে, যদিও ২৬ লাখ টন চাল আমদানির আইপিও দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন