এডিবির প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশে শীর্ষে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার

শামীম রাহমান

পরিবহন, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, অবকাঠামোসহ দেশের বিভিন্ন খাতে গত পাঁচ বছরে ৪১২ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সংস্থাটির ঋণ অনুদানে বাস্তবায়িত হচ্ছে বিভিন্ন বিনিয়োগ, কারিগরি সহায়তা সমীক্ষা প্রকল্প। প্রকল্পগুলোয় দেশী-বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ম্যাক্স ছাড়াও তমা কন্সট্রাকশন চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) জয়েন্ট ভেঞ্চার, গন্ধর্বপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট (এসএনসি), আবদুল মোনেম লিমিটেড এবং সাংহাই ইলেকট্রনিক রিভারির জয়েন্ট ভেঞ্চার রয়েছে বাংলাদেশে এডিবির শীর্ষ পাঁচ ঠিকাদারের তালিকায়।

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর ঠিকাদার/সরবরাহকারীদের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে এডিবি। সময়ে সব মিলিয়ে এডিবির ৮৬টি প্রকল্প চলমান ছিল। এডিবির করা তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এডিবির অর্থায়নে পরিবহন খাতের একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের একটি বড় অংশ বাস্তবায়ন করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করপোরেশনের (সিসিইসিসি) সঙ্গে যৌথভাবে প্রায় সাড়ে হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এডিবির অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প ছাড়াও বিদেশী সহায়তা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে রূপপুর পারমাণিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ছয়টি লট, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের সঞ্চালন লাইন, চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আন্ধারমানিক নদীতে ৬৬৭ মিটার দীর্ঘ সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

এডিবিসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে গতকাল একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ম্যাক্স গ্রুপের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর প্রকল্পে সিআরইসি তমা কন্সট্রাকশনের যৌথভাবে আরো প্রায় সাড়ে হাজার কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

ম্যাক্সের পর বাংলাদেশে এডিবির সবচেয়ে বেশি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে তমা সিআরইসির জয়েন্ট ভেঞ্চার। বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে ২২ কোটি লাখ ডলারের কাজ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

গন্ধর্বপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট এসএনসি বাস্তবায়ন করছে এডিবির আরো ১৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের কাজ। মূলত পানি নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে এডিবির ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের উন্নয়ন কাজ। এর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কের প্রায় কোটি টাকার একটি প্যাকেজের নির্মাণকাজ। প্যাকেজের মাধ্যমে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনসহ চার লেনে উন্নীতের কাজ করছে আবদুল মোনেম লিমিটেড।

বাংলাদেশে এডিবির শীর্ষ পাঁচ ঠিকাদারের একজন হওয়ার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আবদুল মোনেম লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম বণিক বার্তাকে বলেন, যেকোনো স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজন কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ গুণগত মান বজায় রাখা। আমরা সব সময় এই নীতি মেনে চলার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে আমার বাবা আবদুল মোনেমের একটা দর্শন রয়েছে। আমরা সেই দর্শনটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি এবং ভবিষ্যতেও আমরা তা অব্যাহত রাখতে চাই।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতে এডিবির অর্থায়নে কোটি ১২ লাখ ডলারের বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সাংহাই ইলেকট্রনিক রিভারির জয়েন্ট ভেঞ্চার। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে বগুড়ায় একটি ৪০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে আরেকটি ৪০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করছে জয়েন্ট ভেঞ্চার। এর বাইরে গোপালগঞ্জে ৪০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৩২ কেভি বে সম্প্রসারণের কাজও করছে সাংহাই ইলেকট্রনিক রিভারি।

তালিকাভুক্ত শীর্ষ পাঁচ ঠিকাদারি/সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বাইরে এডিবির আরো প্রায় ২৯১ কোটি ডলারের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির যে বিনিয়োগ, তার একটা বড় হচ্ছে পরিবহন খাতে। পরিবহন খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন এবং বিমানবন্দর-গাজীপুর বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের একটি অংশ বাস্তবায়ন করছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর। এডিবিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, উন্নয়নকাজে ঠিকাদার নিযুক্ত করার প্রক্রিয়াটি এখন প্রায় শতভাগ ডিজিটাল হয়েছে। আইন নীতিমালা অনুসরণ করে আহ্বান করা দরপত্রের মাধ্যমে যোগ্য অভিজ্ঞ ঠিকাদাররাই বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন