কভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবীতে বদলে যাবে অনেক কিছুই। হয়তো বিলীণ হয়ে যাবে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্য। শিল্প ও শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশাও। পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে অনেকটা নীরবে, নিভৃতে। বিষয়গুলো উপলব্ধি করে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, নেপাল, হংকং, ফিনল্যান্ড, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মাইক্রো গ্যালারি পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে ‘উন্নততর বিশ্বের জন্য বিশ্বব্যাপী অভিক্ষেপ উৎসব কল্পনা’ বিষয়ক ভিডিও প্রদর্শনী।
দশটি দেশের ৫০জন শিল্পী ‘প্রজেক্ট ফরোয়ার্ড ২০৪৮’- এর মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ামে নিজেদের কাজগুলো তুলে ধরেছেন। শিল্পীরা দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে ভবিষ্যৎ পৃথিবী কেমন হবে। ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর শিল্পীরা দিনাব্যাপী তাদের নিজ নিজ দেশে এ ভিডিও প্রদশর্নীর আয়োজন করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছে ‘আমাদের’। এ দলে চিত্রশিল্পী ফারজানা আহমেদ ঊর্মিসহ বাংলাদেশ থেকে আরো রয়েছেন চিত্রশিল্পী ও পাপেটিয়ার সজল দাস, চিত্রশিল্পী আহ্সানা অঙ্গনা, অয়োময় অরণ্য। এছাড়া শব্দশিল্পী হিসেবে রয়েছেন সজীব।
বাংলাদেশের এ শিল্পীরা মূলত রায়ের বাজার এলাকা ঘিরে তাদের প্রকল্পটি সাজিয়েছেন। রায়ের বাজারের মৃৎশিল্প ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এ বিষয়টাকে উপলব্ধি করে প্রাচীন ঐতিহ্যটি তুলে ধরেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ফারজানা আহমেদ ঊর্মি বলেন, ‘আমরা অনুভব করেছি মাটি থেকেই সব কিছুর উৎপত্তি, এবং একটা সময় সবকিছুই ধীরে ধীরে মাটিতেই চলে যাবে। বিষয়টির সঙ্গে আমরা রায়ের বাজারের মৃৎপাত্রগুলোর সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছি, কারণ মৃৎশিল্পের পাত্রগুলোও ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার পথে। এ কাজে আমরা মৃৎশিল্পী মরন চাঁদ পালকে নিয়ে কাজ করেছি। তিনি মূলত টেপা পুতুল আঁকেন। ফিউচারিস্টিক ঢঙে সে পুতুলগুলো আবার আঁকা হয়েছে।’
প্রকল্পের অংশ হিসেবে রায়ের বাজারের দেয়ালেও ছবি এঁকেছে শিল্পীরা। টুকরো টুকরো ভাঙা মৃৎপাত্রগুলো নতুন করে তুলতে তার ওপর বিভিন্ন নকশা আঁকেন তারা। শিল্পীদের ফিউচারিস্টিক অ্যাপ্রোচে করা ড্রয়িংয়ে ফিউশনের মাধ্যমে তারা বোঝাতে চেয়েছে, নতুন পৃথিবীতে কীভাবে তারা মৃৎশিল্পীকে উপস্থাপন করবেন।
আহ্সানা অঙ্গনা জানালেন, ‘কাজটি করার অভিজ্ঞতা অদ্ভূত এবং সুন্দর। মাটির সঙ্গে আমাদের আদি সম্পর্ক। শিল্পী হিসেবে তাই আমরা এমন একটি কাজ উপস্থাপন করতে চেয়েছি যেখানে আমরা মাটির ব্যবহার দেখাবো এবং ভবিষ্যতে মাটিকে নিয়ে কতভাবে কাজ করা যায় তা তুলে ধরবো। তাই আমরা মাটির তৈজসপত্র ও মাটি শিল্পকে তুলে ধরেছি।’
রায়ের বাজারের গদি ঘরের বৈশাখী যুব সংগঠনে গতকাল ও আজ বেলা ১১টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ভিডিও উপস্থাপনাটা দেখানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গদিঘর তৈরি হয়েছে ১৯১৮ সালে, মুঘল আমলে এখানে কোষাগার ছিল। বাড়িটি প্রায় দুইশত বছর পুরানো। এরও প্রায় জীর্ণ অবস্থা। হয়তো আগামীতে বিলীন হয়ে যাবে। একইসঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মৃৎপাত্রও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রদর্শনীর জন্য এ জায়গাটি বেছে নিয়েছেন শিল্পীরা।
অয়োময় অরণ্য প্রজেক্ট ফরোয়ার্ড ২০৪৮ প্রকল্পে ভিডিও এডিটিংয়ের সংঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তার ভাষায়, ‘মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর। তাই এই মাটির সব কাজকে একত্র করে একটি দৃশ্যচিত্র কল্পনা তৈরি করতে আমার অনেক ভাবতে হয়েছে। এ দৃশ্যচিত্র কল্পনা তৈরি করার সময় আমার মধ্যে আমাদের আদি পুরুষের ব্যবহƒত মাটি এবং তাদের নিয়ে বিভিন্ন কাজ আমাকে প্রেরনা জুগিয়েছে। অংশগ্রহণকারী শিল্পী সজল দাস বলেন, ‘পাঁচ কিংবা দশ বছর পর কীভাবে মৃৎশিল্পকে দেখতে চাই সে জায়গা থেকে আমরা সবাই মিলে এ প্রজেক্টে কাজ করেছি।’
প্রজেক্ট ফরোয়ার্ড ২০৪৮ বা প্রকল্প অগ্রসরমান: ২০৪৮ শীর্ষক উপস্থাপনায় বাংলাদেশের এ শিল্পীরা মূলত প্রাচীন ও প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলোর সংযোগ ঘটাতে চেয়েছেন। হারিয়ে যেতে থাকা ঐতিহ্যগুলো ভবিষ্যতে পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস নিয়ে গদিঘরের ইতিহাসকে আবিষ্কারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এটিকে ঘিরে আরো কিছু কাজও করতে চান তারা।