বারির পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবন

কাঁঠাল দিয়ে তৈরি হবে দই আইসক্রিম চকোলেট চিজ

মো. হাজিনুর রহমান শাহীন, গাজীপুর

কাঁঠাল দিয়ে তৈরি খাদ্যপণ্য দেখাচ্ছেন বারির বিজ্ঞানীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের বিজ্ঞানীরা এবার উদ্ভাবন করেছেন কাঁঠালের পাল্প দিয়ে দই, চকোলেট, আইসক্রিম, চিজ তৈরির উপকরণ প্রযুক্তি। উন্নত মান, স্বাদ অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ এসব খাদ্য সারা বছর সহজেই যে কেউ তৈরি করতে পারবেন। সম্প্রতি কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পোস্টহারভেস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রসেসিং অ্যান্ড মার্কেটিং অব জ্যাকফ্রুট প্রকল্পের মাধ্যমে এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়।

এর আগে বারির বিজ্ঞানীরা কাঁঠাল চিপস, আচার, কাটলেট, জ্যাম, জেলিসহ প্রায় ২০টি পণ্যের উপকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ এবং সাড়া ফেলে। এসব পণ্য উৎপাদন বাজারজাত করে অনেক উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। শুধু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই নন, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানও এসব পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ বা দেশের বাইরে রফতানি করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়।

পোস্টহারভেসট টেকনোলজি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকল্পের প্রধান গবেষক . মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চার ছাত্র তাকে সহায়তা করেন।

বারির পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত মোট কাঁঠালের ৪৩-৪৫ ভাগ শুধু প্রক্রিয়াকরণ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। দেশের জাতীয় ফলের অপচয় রোধকল্পে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন হাতে নেয় পোস্টহারভেস্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রসেসিং অ্যান্ড মার্কেটিং অব জ্যাকফ্রুট নামে একটি গবেষণা প্রকল্প। প্রকল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করতে থাকেন কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের নানা উপকরণ প্রযুক্তি। যাতে উদ্যোক্তারা সারা বছরই বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে কাঁঠাল ব্যবহার করতে পারেন। কাঁঠালের অপচয় রোধ, কৃষকদের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, উদ্যোক্তা তৈরি, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাঁঠালের পণ্যের বড় ধরনের উৎপাদন কর্মের মাধ্যমে একে শিল্পের মর্যাদা, ব্যাপক কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা, সর্বোপরি কাঁঠালের প্রক্রিয়াকরণ পণ্য বিদেশে রফতানী করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে একের পর এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন . মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। তারা কাঁচা পাকা কাঁঠালের যেসব প্রক্রিয়াকরণ পণ্য উদ্ভাবন করেছেন তা এখন দেশের বড় বড় সুপার শপে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়ে এসব পণ্যের ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

কাঁঠালজাত খাদ্যপণ্যের উদ্ভাবক বারির বিজ্ঞানী . মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ধারাবাহিকতায় বছর আমরা দই, পুষ্টিকর আইসক্রিম, চকোলেট চিজ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। সবচেয়ে বড় বিষয়, এগুলো তৈরি করতে দুধের সঙ্গে শুধু কাঁঠালের পাল্প প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যদি কোনো উদ্যোক্তা কাঁঠালের পাল্প সংরক্ষণ করেন, তা দিয়ে সারা বছরই এসব পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। কাঁঠাল যেহেতু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল, কাজেই পাল্প দিয়ে তৈরি পণ্যও সাধারণ বাজারের পণ্য থেকে অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যসম্মত। এখানে কোনো অতিরিক্ত বা কৃত্রিম রঙ বা ফ্লেভার ব্যবহার করা হয় না। পণ্যগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং দেখতেও সুন্দর। তিনি জানান, দই তৈরিতে শতকরা - ভাগ পাল্প ব্যবহার করা হয়। আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার করা হয় - ভাগ পাল্প। আর চিজ তৈরিতে ৫০-৬০ ভাগ পাল্প ব্যবহার করতে হয়।

তিনি আরো জানান, যে কেউ স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করে এগুলো তৈরি করতে পারবেন। এসব তৈরি করতে তেমন বড় যন্ত্রপাতির দরকার হয় না। একটি ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর বা ছোটখাটো কিছু হোমমেড যন্ত্র দিয়েই এসব পণ্য খুব সহজেই তৈরি করা যাবে। যদি কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ৮০০ টাকার কাঁচামাল ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি খুব সহজেই হাজার ৫০০ টাকার পণ্য তৈরি করতে পারবেন। অর্থাৎ বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। আর দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি ব্যাপক পরিসরে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব পণ্য তৈরি করে, তাহলেও দেশে-বিদেশে এসব পণ্যের ব্যাপক বাজার তৈরি হবে।

বারির পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের প্রধান মো. হাফিজুল হক খান জানান, প্রতি বছর আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল নষ্ট হয়। অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে কাঁঠালের বহুবিধ ব্যবহারের এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন