কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক . মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ নয় শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সকালে কুয়েটের জনসংযোগ তথ্য শাখা থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৬তম (জরুরি) সভায় তাদের বহিষ্কার করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বেলা ৩টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন সাদমান নাহিয়ান সেজান, মো. তাহামিদুল হক ইশরাক, মো. সাদমান সাকিব, . . . রাগিব আহসান মুন্না, মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, মো. রিয়াজ খান নিলয়, ফয়সাল আহমেদ রিফাত মো. নাইমুর। তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ অন্য তথ্য পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় ছাত্রশৃংখলা আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেটের সভায় শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

একই সিন্ডিকেটের সভায় অধ্যাপক . মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

কমিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক . মহিউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি গণিত বিভাগের অধ্যাপক . আলহাজ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এছাড়া সদস্য করা হয়েছে কুয়েটের অধ্যাপক . খন্দকার মাহবুব, খুলনা জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে।

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক . কাজী সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক পুলিশ কমিশনারকে গতকাল চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা প্রতিনিধি দিলে শিগগিরই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে। 

মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছিলেন।

সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই জরুরি সভা মুলতবি করা হয়। শুক্রবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হয়। ৭৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় -১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিকাল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এতে ভোগান্তি নিয়ে হল ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার ইইই বিভাগের অধ্যাপক লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের পাশের ভাড়া বাসায় মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর মানসিক নিপীড়নের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। শিক্ষক সমিতি বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। অধ্যাপক সেলিমের পরিবারও এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে।

অধ্যাপক সেলিম হোসেনের স্ত্রী সাবিনা খাতুন রিক্তা গতকাল দুপুরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার ছয় বছরের মেয়েকে এতিম আমাকে স্বামীহারা করা হয়েছে, এখন আমি কী করব। কী নিয়ে থাকব, একটানা কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন