সিংড়ায় বারোমাসি তরমুজ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে

মাহবুব হোসেন, নাটোর

মেধা, শ্রম চেষ্টা থাকলে কম পড়ালেখা আর দরিদ্র পরিবার থেকেও যে সফলতা অর্জন করা যায় তারই অনন্য দৃষ্টান্ত আদিবাসী কৃষক নিতিশ চন্দ্র সরদার ওরাওঁ। মাছ তরমুজ চাষে সফল এক কৃষক তিনি। সফল কৃষকের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের চালাপাড়া গ্রামে। অভাবের তাড়নায় মাধ্যমিকে গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। জীবিকার তাগিদে কৃষি দিনমজুরির কাজ করতে হয়েছে।

কয়েক বছর আগে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন নিতিশ ওরাওঁ। মৎস্যচাষের মাধ্যমেই তার দিনবদলের পালা শুরু হয়। কিছু দিন আগে পাবদা মাছ চাষ করে সফল মৎস্যচাষী হিসেবে এলাকায় পরিচিত হয়েছেন। এখন আবার পরিচিত হচ্ছেন সফল তরমুজ চাষী হিসেবে। মাত্র ৭০ শতাংশ জমিতে বারোমাসি হলুদ তরমুজ চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ায় নিতিশের পরিচিত এনে দিয়েছে। নিতিশের সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন তরমুজ চাষ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নিতিশের ক্ষেতের মাচায় ঝুলছে তরমুজ। ক্ষেতজুড়ে শোভা পাচ্ছে হলুদ, কালো ডোরাকাটা তরমুজ। উচ্চফলনশীল ব্ল্যাক বেরি, বাংলালিংক গোল্ডেন ক্রাউন নামের তিন জাতের তরমুজ খেতে যেমন সুস্বাদু দেখতেও আকর্ষণীয়।

কৃষক নিতিশ জানান, প্রথমে ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে বারোমাসি তরমুজ চাষের ধারণা পান তিনি। পরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় গত সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু করেন চাষ। জমি লিজ, মাচা তৈরির উপকরণসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৭০ শতাংশ জমিতে তার মোট খরচ হয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ দিনেই নিতিশের ক্ষেতের তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়। প্রতিটি তরমুজের ওজন - কেজি। বিক্রি করেন কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে। প্রথম দফায় ঢাকায় গিয়ে লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেন তিনি। প্রথম দফা বিক্রির এক সপ্তাহের মধ্যেই আবারো বিক্রির উপযোগী হয় ক্ষেতের তরমুজ।

নিতিশ আরো জানান, প্রথম দফা তরমুজ বিক্রি করে তার খরচের টাকা উঠে গেছে। এখনো দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ তার ক্ষেতে আছে। বাকি তরমুজ ঠিকঠাক বিক্রি করতে পারলে খরচ বাদে লাখের বেশি আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

বারোমাসি তরমুজ একই জমিতে তিনবার চাষ করা যায়। প্রথমবার মাচা বেড তৈরি করতে যে খরচ হয় দ্বিতীয় তৃতীয়বার খরচ হয় তুলনামূলক কম। সেই হিসাবে নিতিশের ওই ৭০ শতাংশ জমিতে খরচ বাদে বছরে আয় হবে - লাখ টাকা। এমনটাই স্বপ্ন দেখছেন কৃষক নিতিশ ওরাওঁ।

নিতিশের স্ত্রী অভিরন রানীও কাজ করেন তরমুজের ক্ষেতে। বারোমাসি তরমুজ চাষের সফলতা স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই। নিতিশের এমন সাফল্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে লোকমুখে। স্থানীয়দের কাছে একজন আদর্শ কৃষক হয়ে উঠেছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজা বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের জমি তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় বারোমাসি তরমুজ চাষের উপযোগী অঞ্চল। এখানে নিতিশের মতো অনেক কৃষকই তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। দেশে তিন জাতের বারোমাসি তরমুজের অনেক চাহিদা। যারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন তারা লাভবান হচ্ছেন। আমরা চাষীদের পাশে আছি। চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ সহযোগিতা করছি। সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন