রামপালে দ্রুত উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা বিদ্যুৎ বিভাগের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দ্রুত উৎপাদনে নিয়ে আসতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে আগামী বছরের মার্চে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত কয়লা আমদানিতে প্রয়োজনীয় চুক্তি এখনো সই হয়নি। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার্য কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।

সারা দেশে বর্তমানে গ্যাস সংকটে দুই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এলএনজি আমদানির মাধ্যমে সংকট মোকাবেলা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রকল্পের সংশোধিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে কভিডের কারণে তা কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকল্পটির কার্যক্রম আর বিলম্বিত করতে চাইছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা গতকাল রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। প্রকল্প ঘুরে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, আগামী বছরের মার্চেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট চালু করা হবে।

হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) জয়েন্ট ভেঞ্চারে গঠিত বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে পারলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসনির্ভরতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরুর লক্ষ্য ধরা হয়েছিল আগামী বছরের মার্চে।

তবে মহামারীর প্রাদুর্ভাব, বিদেশী কর্মীদের প্রস্থান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় প্রথম ইউনিট সময়মতো চালু করা যায়নি বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিষয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপপরিচালক প্রকৌশলী রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আগামী বছরের মার্চকে লক্ষ্য করে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি এগিয়ে নিচ্ছি। প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৭৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। যেভাবে কাজ চলছে সেটি ঠিক রাখা গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতিতে দেখা গেছে, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লার, চিমনি, পাওয়ার হাউজ, কোল ইয়ার্ডের মেঝে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া কয়লা খালাসের জেটির কাজও শেষ। প্রকল্পের প্রাথমিক অবকাঠামোগত কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের মে পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৬৭ দশমিক ১৫ আর্থিক অগ্রগতি ৬৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।

এর আগে চলতি বছরের মার্চে প্রকল্প পরিদর্শনকালে বিপিডিবির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন জানিয়েছিলেন, চলতি ডিসেম্বরেই উৎপাদনে আসবে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই কথা জানিয়েছিল বিদ্যুৎ খাতের নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল। ওই সময় সংস্থাটি বলেছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ১৬ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাবে। তবে শেষ পর্যন্ত মহামারীসহ নানা জটিলতার কারণে ঘোষিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা যায়নি। বর্তমানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার বিষয়টি অনেকটাই কয়লা আমদানির ওপর নির্ভর করছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিআইএফপিসিএলের একটি সূত্র বলছে, রামপালে কয়লা আমদানির জন্য দীর্ঘ স্বল্পমেয়াদি দুই ধরনের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি কয়লা আমদানির দরপত্র চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে দুই প্রস্তাবে স্থানীয় একটি কোম্পানি কনসোর্টিয়ামের ভিত্তিতে দরপত্র জমা দিয়েছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) চীনের একটি কোম্পানিও দরপত্র জমা দিয়েছে। চীনা কোম্পানিটির দরপত্র বাতিল হয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান কয়লা আমদানির কাজ পেয়েছে তা এখনই পরিষ্কার করে জানাচ্ছে না কোনো দপ্তর। এছাড়া আমদানীকৃত কয়লার উৎস দেশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইন্দোনেশিয়াকে নির্বাচন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে।

বিষয়ে বিদ্যুৎ খাতের নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্রুত চালু করার জন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়লা আমদানি চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপালের জন্য আমরা কয়লা আমদানি করব। সেটির সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন