ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে উত্তরণ এখন শিক্ষার প্রধান বিবেচ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বায়ন তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্ফোরণে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভক্তি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। পুঁঁজি শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে উত্তরণ এখন শিক্ষার প্রধান বিবেচ্য। পরিস্থিতিতে বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিক সামষ্টিক চেতনার সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এগিয়ে চলছে। কয়েক বছর পরই পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের ঢেউ বইতে শুরু করবে। এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অসাম্প্রদায়িক অনন্য বৈশিষ্ট্যের এক গৌরবময় বিদ্যাপীঠ। সূচনালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মুক্তবুদ্ধি চর্চা শুরু হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির আগের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব অগণতান্ত্রিক, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার . শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান . কাজী শহীদুল্লাহ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে আজাদ। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক . এএসএম মাকসুদ কামাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক . মুহাম্মদ সামাদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শেরেবাংলা কে ফজলুল হক, নবাব সলিমুল্লাহ সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরীর মতো নেতাদের কাছে বাংলায় একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং তারা সেটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকার একটি ঐতিহাসিক সম্পদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম একদিন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সময় নষ্ট করবেন না। আপনারা আমাদের ভবিষ্যৎ। সোনার বাংলা গড়তে যে ধরনের আত্মপ্রত্যয় থাকা দরকার, তা অর্জন করতে অবশ্যই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। ২৫ বছর পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। আপনারা সেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাস বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার ইতিহাস অবিচ্ছেদ্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণামূলক শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। প্রতিষ্ঠার প্রথম অর্ধশত বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিশীলিত যে মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, তাদের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। যাদের রক্তের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাদের অনেকেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পূর্ব বাংলায় একটি শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণীর বিকাশ ঘটিয়ে সমাজ, অর্থনীতি সংস্কৃতির বিবর্তন উন্নয়নে অব্যাহতভাবে যদি কোনো একক প্রতিষ্ঠান অনন্যসাধারণ ভূমিকা অবদান রেখে থাকে, তা নিঃসন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বিশ্বে বিরল। আন্তর্জাতিক জ্ঞানরাজ্যেও এর অবদান অনস্বীকার্য।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন