অনুমোদনের দুই বছরেও হয়নি ভূমি অধিগ্রহণ

নওগাঁয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পে ধীরগতি

আরমান হোসেন রুমন, নওগাঁ

নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদনের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি করতে পারেনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব পাঠানো হয়েছে ১৪ মাস আগে। তবে বেজা থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় এখনো ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। এতে প্রকল্পটির কাজ পিছিয়ে পড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখা হাজারো বেকার যুবক উদ্যোক্তার মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছে জেলাবাসী।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাপাহার উপজেলার খেড়ুন্দা মৌজায় সাপাহার-খঞ্জনপুর বিওপি ক্যাম্পের রাস্তার উত্তর পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বেজা ২৫৪ দশমিক ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে ওই মৌজার ২৫০ দশমিক ৬৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ বেজা। এর ১১ দিন পর আবারো ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ব্যয় জানতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বেজা। এর মাস ১৭ দিন পর গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ভূমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য ব্যয় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে বেজাকে চিঠি দেয়া হয়।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়।

ঘোষণার পর নওগাঁ- (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম শাহ চৌধুরী তত্কালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফাহাদ পারভেজ বসুনীয়া সম্মিলিতভাবে সাপাহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে সুপারিশ পাঠান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সাপাহার অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়ে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী।

বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী এই উপজেলা ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। যেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এর আশেপাশের পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর উপজেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। যেখানে সাপাহারসহ আশপাশের উপজেলার হাজারো বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণে আনুষঙ্গিক খরচসহ সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি চিঠি নির্বাহী চেয়ারম্যান বেজাকে পাঠানো হয়েছে। বেজা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিলে বিষয়টি নিয়ে জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হবে। অধিগ্রহণে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।

বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, সাপাহার অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে বেজা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব এলে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করা হবে। আমরা অধিগ্রহণ বিষয়ে যথেষ্ট এগিয়েছি। এখন বরাদ্দ পেলেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন