বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির বৈঠক

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও যোগাযোগের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়টি বেশ পুরনো। ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতিও যার নেতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় বসেছিলেন সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা। সেখানে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় দুই সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় যোগাযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খান, নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বিএসইসির পক্ষে সংস্থাটির কমিশনার অধ্যাপক . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মো. মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক শেষে জানান বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে দুই সংস্থার মধ্যে আরো কার্যকর সমন্বয় যোগাযোগের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা, মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করবে। বৈঠকে বন্ডে বিনিয়োগের সীমা, আইসিবির একক গ্রাহক ঋণসীমা, ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ লভ্যাংশ, করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে লভ্যাংশ স্থানান্তর-সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসইসি সূত্র বলছে, ব্যাংক ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ডে বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সীমার বাইরে রাখার বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে। পাশাপাশি বন্ডে বিনিয়োগ হিসাব করার ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে বিবেচনা করার কথাও বলা হয় বিএসইসির পক্ষ থেকে। বিষয়গুলো আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে এগুলো কার্যকর করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যান্য খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও নগদ লভ্যাংশকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে কোম্পানি আইনেও লভ্যাংশ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া কর আইনেও নির্ধারিত অনুপাতে নগদ লভ্যাংশ না দিলে জরিমানা হিসেবে বাড়তি কর আরোপের বিধান রয়েছে। ব্যাংকের আমানতকারীদের মতো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদেরও তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন হিসেবে লভ্যাংশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে আপত্তি না জানায় সেজন্য অনুরোধ করা হয়। তবে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান হচ্ছে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে পুঞ্জীভূত লোকসান থাকলে লভ্যাংশ দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে বিএসইসির প্রস্তাব অনুসারে নগদ লভ্যাংশের বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বিএসইসি প্রণীত করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড (সিজিসি) নিয়েও গতকালের বৈঠকে দুই সংস্থার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সিজিসি অনুসারে বিভিন্ন কমিটি গঠন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মতো বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের বিধানে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বিএসইসির প্রণীত সিজিসি অনুসারে, বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মত হচ্ছে সুশাসনের বিষয়টিকে তারাও প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে তাদের আইনি বিধিবিধান অনুসরণ করে চলতে হয়। তাই আইনিভাবেই বিষয়টির সমাধান আসতে হবে।

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে ব্যাংকের থাকা অদাবীকৃত লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে লভ্যাংশ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অদাবীকৃত শব্দের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শব্দগত বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একক গ্রাহক ঋণসীমার বিষয়টি বিএসইসির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গতকাল তুলে ধরা হয়। তবে আইসিবির ঋণসীমার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজারের সমৃদ্ধি স্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলে সেটিও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরসনে দুপক্ষ একমত হয়েছে। তবে বৈঠকে কোনো বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দুটি পক্ষের মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরেকটি বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন