চট্টগ্রাম টেস্টের ফলাফল চতুর্থ দিন শেষেই প্রায় চূড়ান্ত হয়ে ছিল। গতকাল পঞ্চম ও শেষদিন ১০ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ৯৩ রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। অতিথিরা শুধু দুই ওপেনারকে হারিয়ে এ রান তুলে নিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। উল্লেখ্য, ১২ টেস্টের দ্বৈরথে এটা পাকিস্তানের ১১তম জয়। বাংলাদেশের অর্জন শুধু একটি ড্র।
পাকিস্তানের জন্য টার্গেট ছোঁয়ার কাজটি সহজ করে দেন দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আব্দুল্লাহ শফিক। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের পার্টনারশিপ গড়া এ দুই ব্যাটার দ্বিতীয় ইনিংসে বোর্ডে যোগ করেন ১৫১ রান। পাকিস্তানের জার্সিতে কোনো টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপের দ্বিতীয় নজির এটি।
৭৩ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন শফিক। ১২৯ বলে আট বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। যদিও মাত্র নয় রানের জন্য উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি হলো না আবিদ আলীর। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে ৯১ রানে আউট হয়ে যান তিনি। ১৪৮ বলের ইনিংসে তিনি বাউন্ডারি মারেন ১২টি। আবিদ আলী আউট হলেও ততক্ষণে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তান। অতিথিদের তখন প্রয়োজন ছিল মাত্র ২২ রান। আজহার আলী ও বাবর আজম এ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রাম টেস্টে পাকিস্তানের কাছে আট উইকেটে পরাজয় শেষে বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, জাতীয় দলে আসা ক্রিকেটারদের যথেষ্ট ভালোভাবে তৈরি করছে না ঘরোয়া ক্রিকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকান এ কোচ বলেন, বেশকিছু মেধাবী ও সম্ভাবনাময় তরুণ ক্রিকেটার আসছে, তবে আন্তর্জাতিক ব্যাটার ও বোলার হিসেবে জায়গা করে নিতে তাদের আরো লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা এ-দলের হয়ে তারা যত বেশি ক্রিকেট খেলবে, ততই জাতীয় দলের জন্য ভালো। এ মুহূর্তে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঢুকতে হলে বিশেষভাবে প্রস্তুতি দরকার। এটা বিসিবিকে নিশ্চিত করতে হবে যে যারা আসছে তারা যেন দলে প্রভাব ফেলতে পারে এবং পায়ের তলে মাটি খুঁজে পেতে খুব বেশি সময় না নেয়।
ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করা লিটন কুমার দাসের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ ডোমিঙ্গো বলেন, গত ১৮ মাসে প্রায় ৬০ গড়ে রান করেছে লিটন। মিডল অর্ডারে সে আমাদের হয়ে সত্যিই খুব ভালো কিছু ইনিংস খেলেছে। ৬ কিংবা ৭ নম্বরে সে নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে; এ পজিশনে ব্যাটিং করে সে শেষ পর্যন্ত দলের আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখছে। আমরা জানি, সে অবিশ্বাস্য এক খেলোয়াড়। গত এক বছরে টেস্টে সে আমাদের জন্য ইতিবাচক প্রাপ্তি। সম্ভবত আর এক বছরের মধ্যে সে ৪ কিংবা ৫ নম্বরে উঠে আসবে।
এদিকে প্রথম ইনিংসে ১১৬ রানে ৭ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে এক উইকেট শিকার করা তাইজুল ইসলামকে প্রশংসায় ভাসালেন বাংলাদেশ দলনায়ক মুমিনুল হক। তিনি বলেন, আমি মনে করি এ ম্যাচে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তাইজুলের বোলিং। এ পিচে সে আট উইকেট নিয়েছে, যা কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমি মনে করি সে অনেক উন্নতি করেছে, যা সবাইকে অনুপ্রাণিত করছে। তাইজুলের কারণেই আমরা লিড নিতে পেরেছি।
ডোমিঙ্গো বাংলাদেশের পরাজয়ের কারণ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে বড় স্কোর না পাওয়াকে দেখছেন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা সত্যিই বেশ ভালো উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসই আমাদের ডুবিয়েছে। ২৫০-২৮০ স্কোর পেলে আমরা দারুণ অবস্থানে থাকতাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৩৩০ ও ১৫৭। পাকিস্তান: ২৮৬ ও ২০৩/২ (আবিদ ৯১, শফিক ৭৩, আজহার ২৪*, বাবর ১৩*; মিরাজ ১/৫৯, তাইজুল ১/৮৯)। ফল: পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আবিদ আলী (পাকিস্তান)। সিরিজ: পাকিস্তান ১-০-তে এগিয়ে