জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

একুশে স্বাধীনতা পদকজয়ী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। জাতির বাতিঘরখ্যাত অধ্যাপকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

গত অক্টোবর পেটে ব্যথা অনুভূত হলে তাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, ফুসফুসে পানি জমেছে। পরে তাকে নেয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় বছর তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতা একুশে পদক পাওয়া শিক্ষাবিদ, গবেষক লেখক অধ্যাপক . রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমি পুরস্কার নজরুল একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বইয়ের লেখক তিনি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে তার অবদান দেশ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে শিক্ষক হিসেবে পান। প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুতে শোকবার্তায় স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার প্রিয় শিক্ষকের উৎসাহ প্রেরণা আমাকে সাহস জুগিয়েছে এবং এগিয়ে যেতে শক্তি দিয়েছে।

রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষক ছিলেন ভাষাবিজ্ঞানীও। যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) উপাচার্য ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করে।

বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিও ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে কমিটির সদস্যরা এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক . কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। শোকবার্তায় . কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জাতির পিতার আদর্শ চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতেন। তার জীবন সাহিত্যকর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করবে।

১৯৩৪ সালের জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কালাকান্দা গ্রামে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে উচ্চশিক্ষা নেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুধবার দুপুরে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের কফিন নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ডাক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, মত্স্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রেজাউল করিম, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . মো. আখতারুজ্জামানসহ অনেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন