ওমিক্রন সংক্রমণ

আবারো অনিশ্চয়তায় মার্কিন ব্যবসায়িক খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল মার্কিন অর্থনীতি। আগামী বছর   বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি কভিডপূর্ব অবস্থায় ফেরার পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছিল। তবে কভিডের নতুন ধরন নিয়ে উদ্বেগ সবকিছুকে যেন পাল্টে দিয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে হলিউড থেকে শুরু করে এয়ারলাইনস অটোমোবাইল শিল্পের পুনরুদ্ধার। প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনীতিতে ওমিক্রনের প্রভাবের দিকে চেয়ে রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে, বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। খবরের পর অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারগুলোয়। উদ্বেগ নিয়ে শেয়ারদরে পতনের কারণে শুক্রবার একদিনেই বিনিয়োগকারীরা লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে। যদিও সোমবার বাজারগুলো কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।

এদিকে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত পদক্ষেপ হিসেবে জাপান ইসরায়েল সব বিদেশী দর্শনার্থীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কয়েকটি উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা জানিয়েছে, এয়ারলাইনসগুলো খুব বেশি সময়সূচি পরিবর্তন করছে না।

তবে এয়ারলাইনস খাতের সংশ্লিষ্টরা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে, বড় সংস্থাগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে সংস্থার কেন্দ্রগুলোকে রক্ষা করা চেষ্টা করছে। রায়ানএয়ারের প্রধান নির্বাহী মাইকেল লেরি ফ্লাইট বাতিলের কোনো কারণ জানাননি। তবে তিনি কিছু দেশ সম্ভাব্য উড়োজাহাজ ভ্রমণ বন্ধ করা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। জার্মানির ফ্ল্যাগশিপ এয়ারলাইনস লুফথানসা জানিয়েছে, সংস্থাটির ফ্লাইটগুলো এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুচরা বিক্রেতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। চলমান মার্কিন ছুটির কেনাকাটার মৌসুমে কীভাবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়, তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। বৈঠকের আগে ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাকমিলন সরবরাহ চেইনে উন্নতির কথা উল্লেখ করেছেন। গত চার সপ্তাহে মার্কিন বন্দরগুলো দিয়ে শিপিং কনটেইনারের সংখ্যা ২৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি। মার্কিন বাণিজ্য সচিব জিনা রাইমন্ডো বলেন, ওমিক্রন বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

কভিডের নতুন ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ২০২০ সালের মতো অর্থনীতিজুড়ে বিধিনিষেধ আরোপের শঙ্কা তৈরি করেছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মার্কিন চলচ্চিত্র টেলিভিশন শো তৈরি হওয়া হলিউডের কার্যক্রম প্রাক-কভিড স্তরে ফিরেছিল। স্টুডিওগুলো কভিডের সর্বশেষ ধরনের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত জানার অপেক্ষা করছে।

সিনেমা থিয়েটারগুলোয় দর্শকের উপস্থিতিও আগের মতো স্বাভাবিক হচ্ছিল। তবে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব থিয়েটার ওনার্সের একজন মুখপাত্র বলেন, কভিডের নতুন ধরন নিয়ে আবারো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যেখানে ডেল্টার সংক্রমণে দর্শক উপস্থিতি কমে যাওয়া নিয়েই আমরা শঙ্কায় ছিলাম।

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর দুই মাসের জন্য গাড়ি নির্মাণ কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। যদিও এরপর কারখানাগুলো চালু করা হলেও চিপ ঘাটতির কারণে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময় কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। অবস্থায় কভিডের নতুন ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন গাড়ি নির্মাতারাও।

নিশান মোটর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র লরিন লাভ-কার্টার বলেন, এটি নতুন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে আগে থেকেই আমাদের অনেক কভিড প্রোটোকল রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা জেনারেল মোটরসও (জিএম) পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে। জিএমের মুখপাত্র মারিয়া রায়নাল বলেন, নিরাপদ অত্যন্ত কার্যকর টিকা নেয়া নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের কর্মীদের জোরালোভাবে উৎসাহিত করছি। কভিডের নতুন ধরন নিয়ে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আমাদের কভিড প্রোটোকলগুলো পর্যালোচনা সামঞ্জস্য করা চালিয়ে যাব।

বিক্রির সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা টয়োটার ইউএস ম্যানেজমেন্ট টিম গতকাল ওমিক্রন নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির মার্কিন মুখপাত্র স্কট ভ্যাজিন বলেন, মুহূর্তে আমরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের কারখানাগুলোয় সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং মাস্কের মতো কভিড প্রোটোকলগুলো বন্ধ করিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন