নওগাঁয় নেসকোর বৈদ্যুতিক ত্রুটিতে ক্ষতি ৩০ লাখ টাকা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নওগাঁ

নওগাঁয় নদার্ণ ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) বৈদ্যুতিক সংযোগে ক্রুটি দেখা দেয় গতকাল সোমবার। এদিন দুপুরে নেসকোর ১ নম্বর ফিডারের আওতাধীন শহরের আরজী নওগাঁ লাটপাড়া মহল্লার ট্রান্সফর্মারে উচ্চ ভোল্টেজ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায়  শতাধিক গ্রাহকের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হয়ে ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির জরুরি সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে ক্ষতিপূরণ দাবি করে ভুক্তভোগীরা চার ঘণ্টা তাদের গাড়ি আটকে রাখে বলেও খবর পাওয়া গেছে। 

স্থানীয়রা জানান, গত রোববার বেলা ১১টায় শহরের আরজী নওগাঁ লাটাপাড়া মহল্লার কয়েকটি বাড়িতে বৈদ্যুতিক গোলোযোগ দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান ভুক্তভোগীরা। দুপুর ১টার দিকে মহল্লায় নেসকোর ১ নম্বর ফিডারের আওতাধীন ট্রান্সফর্মারে ক্রমাগত বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ বাড়তে থাকে। এ সময় উচ্চ মাত্রার ভোল্টেজ ছড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাই ভোল্টেজের কারণে তাদের বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, সাবমারসিবল মোটর, ল্যাপটপ, এনার্জি বাল্বসহ বেশ কিছু দামী ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিদ্যুতায়িত হয়ে পুড়ে যায়। এ অবস্থায় তারা নেসকোর অভিযোগ নম্বরে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে অসাদাচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

তারা আরো জানান, ঘটনার ১ ঘণ্টা পর নেসকোর জরুরি সার্ভিস সদস্যরা তাদের গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ট্রান্সফর্মারের ত্রুটি ঠিক করেন। কিন্তু সময়মতো না আসায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। ক্ষুব্ধ জনগণ নেসকোর গাড়িটি আটক করে নষ্ট হওয়া ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলো রেখে দেন। সন্ধ্যা নাগাদ ওই গাড়িতে কয়েকশো ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া মহল্লার শতাধিক নারী-পুরুষ এবং সরকারি পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেসকোর গাড়ির সামনে অবস্থান নেন। 

জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নেসকো কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দল আরজী নওগাঁ লাটপাড়া মহল্লায় এসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন। পরে শর্তসাপেক্ষে নেসকোর গাড়ি ছেড়ে দেন ভুক্তভোগীরা। 

লাটাপাড়া মহল্লার আব্দুর রশিদ জানান, তার বাড়ির ফ্রিজ-টিভি ও সাবমারসিবল মোটর পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া তার বাড়িতে ভাড়া থাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত ১৯ শিক্ষার্থীর দুটি ওয়াইফাই রাউটার ও ১৪টি মোবাইল চার্জার বিদ্যুতায়িত হয়ে পুড়ে যায়। এতে আব্দুর রশিদের প্রায় ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। তার অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে নেসকো কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাতে গেলে তার সঙ্গে অসাদাচরণ করা হয়।

এ ছাড়া মধ্যপাড়া মহল্লার আলেয়া বেগম, লাটাপাড়া মহল্লার সার্জিনা বেগম, সোহেল হোসেন, আবু মহসিনসহ অনেকেই বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারা বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে তাদের প্রাণহানির সম্ভাবনা ছিল। নেসকো কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অসাদাচরণের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তারা।

নেসকো নওগাঁ বিক্রয় ও বিতরণ (দক্ষিণ) বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সায়মন আহম্মেদ বণিক বার্তাকে বলেন, উচ্চ মাত্রার ভোল্টেজের কারণে লাটাপাড়া মহল্লার কিছু গ্রাহকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা।  

তিনি জানান, গ্রাহকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত তা সঠিক জানা যায়নি। ক্ষতির তালিকা করতে স্থানীয় দুজন কাউন্সিলর তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভুক্তভোগীদের তালিকাসহ নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।

গ্রাহকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে নেসকোর নওগাঁ বিক্রয় ও বিতরণ (দক্ষিণ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিমুল হককে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তথ্য অধিকারে আবেদন দিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন