স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ দফা নির্দেশনা জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের নতুন উদ্বেগজনক ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে ভারত। এজন্য বিশ্বের ১২টি দেশকে উচ্চঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। উচ্চঝুঁকির তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এছাড়া বাকি দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বতসোয়ানা, চীন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, সিঙ্গাপুর, হংকং ইসরায়েল।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এসব দেশ থেকে ভারতে যাওয়া নাগরিকদের নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কভিড-১৯ শনাক্তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত রোববার নিয়ম চালু হয়। ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটেই ভারতের উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এসব দেশের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণের হটস্পট বা কেন্দ্র দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে হংকং থেকে ভারতে প্রবেশে ইচ্ছুক উড়োজাহাজের যাত্রীদের নয়াদিল্লির বিমানবন্দরে কভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া ব্যক্তিরাই কেবল বিমানবন্দর থেকে ভারতে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। এছাড়া বাকি নয়টি দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীরা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করার অনুমতি পাবেন। পরে তাদের ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়টি।

ভারত ছাড়াও এরই মধ্যে আরো কয়েকটি দেশ ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের প্রবেশে নানা ধরনের বিধিনিষেধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নভেল করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকান ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত রোববার অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ লাইন পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওমিক্রন সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এর জের ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি লেসোথোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশ আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। নতুন ধরন ডেল্টার চেয়েও বেশি সংক্রামক বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তাই এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওমিক্রন বিষয়ে অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথোসহ ডব্লিউএইচও সামনে যেসব আক্রান্ত দেশের নাম ঘোষণা করবে সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দেশের রেস্তোরাঁগুলোয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে, সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটনস্থল, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা/থিয়েটার হল সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বউভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, করোনার উপসর্গ বা লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন এবং করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে। অফিসে প্রবেশ অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি করোনা নিয়ন্ত্রণ কমানোর জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং প্রচার চালানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন