চট্টগ্রাম টেস্টে গতকাল শাহিন শাহ আফ্রিদি বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার গুঁড়িয়ে দেয়ার পর আবিদ আলী ও আব্দুল্লাহ শফিকের নিখাদ ব্যাটিং স্বাগতিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর আশাটুকু শেষ করে দেয়। ৩২ রানে ৫ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করেন আফ্রিদি। এরপর আবিদ ও শফিকের ১০৯ রানের হার না মানা জুটিতে জয়ের সুবাস পাচ্ছে পাকিস্তান। জিততে অতিথিদের আর প্রয়োজন ৯৩ রান। হাতে ১০ উইকেট, আর পুরো একটি দিন।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা আবিদ আলী দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৫৬ রানে, অন্যদিকে শফিক ৫৩ রানে অপরাজিত। পঞ্চম পাকিস্তানি ব্যাটার হিসেবে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করলেন শফিক।
প্রথম ইনিংসে এ দুজন ১৪৬ রানের জুটি গড়েছিলেন, এবার দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০৯ রানে। পাকিস্তানের জার্সিতে কোনো টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপের এটা দ্বিতীয় নজির।
সাগরিকায় গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ৪৪ রানের লিডসহ অতিথিদের ২০২ রানের টার্গেট দিতে সমর্থ হয় মুমিনুল হকের দল। বাংলাদেশের চার ব্যাটার ফেরেন শূন্য রানে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো লিটন দাস দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন।
লিটনের লড়াইয়ের পরও আফ্রিদির তাণ্ডবে দিনটি বাংলাদেশের হলো না। তৃতীয় দিন বিকালে তিন উইকেট তুলে নেয়া আফ্রিদি গতকাল নেন আরো দুটি উইকেট। এছাড়া আরেকটি জায়গায় বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন এ দীর্ঘদেহী পেসার। তার বলে হেলমেটে আঘাত পেয়ে অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বির মাঠ ছেড়ে যাওয়া ছিল দিনের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর বাংলাদেশ উইকেট হারাতে থাকে এবং সেভাবে কোনো ব্রেক থ্রু তৈরি করতে পারেনি।
চার উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিন মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। গতকাল চতুর্থ দিন মাঠে নেমেই বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা। হাসান আলীর বলে বোল্ড হন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ৩৩ বলে ১৬ রান করেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে রাব্বি ও লিটন দলকে টানছিলেন। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি রাব্বি। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় ৯০ রানে আফ্রিদির একটি বাউন্সার সরাসরি তার হেলমেটে আঘাত হানে। এ ঘটনার পর মাঠ ছাড়ার আগে ৭২ বল মোকাবেলায় তিনি করেন ৩৬ রান।
গতকাল বিকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানায়, রাব্বির সিটি স্ক্যানে কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি এবং তিনি শারীরিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছেন। যদিও সতর্কতাবশত তাকে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং তিনি আর এ টেস্টে খেলবেন না।
অবশ্য এ ঘোষণার আগেই রাব্বির জায়গায় ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে ব্যাটিং করেছেন নুরুল হাসান সোহান। ঘটনার পর ব্যাটিংয়ে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ ১১ রান করে সাজিদ খানের শিকার হন। এরপর সোহান ৩৩ বলে ১৫ রান করে ওই সাজিদ খানেরই শিকার হন। টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া লিটন অবশ্য এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। ৮৯ বলে ৬ বাউন্ডারির সাহায্যে ৫৯ রান করে আফ্রিদির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। আবু জায়েদ ও তাইজুল ইসলামের তো রানের খাতাই খোলা হয়নি। তাতে স্বাগতিকরা ৫৬.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৫৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান আলী ৫২ রানে ২টি ও সাজিদ খান ৩৩ রানে ৩টি উইকেট নেন। এরপর বাংলাদেশকে হতাশ করে শতরানের জুটি গড়েন আবিদ ও শফিক।
আজ অলৌকিক কিছু না হলে বড় জয়ের পথেই অতিথিরা। তাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়খরা আরেকটু প্রলম্বিত হবে। ১১ টেস্টের দ্বৈরথে কখনই পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১০টিতেই জিতেছে পাকিস্তান। এখন প্রহর গুনছে ১১তম জয়ের।
তবে এখনই আশা ছাড়ছেন না বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তিনি তাকিয়ে আছেন অভাবনীয় কিছুর দিকে। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রোটিয়া কোচ বলেন, দেখা যাচ্ছে, (চট্টগ্রাম টেস্টে) সবচেয়ে বেশি উইকেট পড়ছে প্রথম সেশনে। ছেলেরা এ টেস্টে যেভাবে লড়াই করছে তাতে আমি গর্বিত। ওরা দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। পাকিস্তান এখন ম্যাচে বেশ এগিয়ে। ওদের আর ৯৩ রান প্রয়োজন। তাই আমাদের বিশেষ কিছু করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই সম্ভব। এখনো জেতার সম্ভাবনা আছে, এ বিশ্বাস নিয়ে কাল (আজ) আমাদের মাঠে নামতে হবে। যদি প্রথম আধঘণ্টায় একটা বা দুটা উইকেট নিতে পারি তাহলে যেকোনো কিছুই সম্ভব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৩৩০ ও ১৫৭ (লিটন ৫৯, ইয়াসির ৩৬; আফ্রিদি ৫/৩২)। পাকিস্তান: ২৮৬ ও ১০৯/০ (আবিদ ৫৬*, শফিক ৫৩*)।—চতুর্থ দিন শেষে