২০২১
সালের প্রথম
দিকে চলতি
বছরের জন্য
চীনের প্রবৃদ্ধি
সম্পর্কে বিশ্বের
প্রধান ২৫টি
ব্যাংক ও
অন্য পেশাদার
প্রক্ষেপণকারীদের মধ্যে
সর্বসম্মত প্রাক্কলন
ছিল ৮
দশমিক ৩
শতাংশ। অন্যদিকে
দেশটির সরকারের
প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা
ছিল ৬
শতাংশের কাছাকাছি,
প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্ষেপণকারীদের
চেয়ে বেশ
কম। তাহলে
এমন কী
সরকার জেনেছিল,
যা বাইরের
প্রক্ষেপণকারীরা জানতে
পারেনি? কিংবা
সরকার কি
ভেতরে ভেতরে
কিছু করার
পরিকল্পনা করেছিল,
যার কারণে
এটা তাদের
কাছে ‘প্রত্যাশিত’
ছিল, এমনকি
প্রবৃদ্ধির সঙ্গে
আপস করে
হলেও?
সাম্প্রতিক সময়ে
অবশ্য আন্তর্জাতিক
ব্যাংকগুলো চীনের
পুরো বছরের
প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ
কমিয়েছে, যেহেতু
দেশটির অর্থনীতি
সম্প্রসারণের গতি
অনেকটা মন্থর।
বছর থেকে
বছর হিসাবে
প্রথম দুই
প্রান্তিকে যথাক্রমে
১৮ দশমিক
৩ শতাংশ
এবং ৭
দশমিক ৯
শতাংশের বিপরীতে
তৃতীয় প্রান্তিকে
দেশটির প্রবৃদ্ধি
ছিল কেবল
৪ দশমিক
৯ শতাংশ।
বছরভিত্তিক হিসাবে
প্রথম প্রান্তিকের
উচ্চ প্রবৃদ্ধি
প্রধানত এসেছিল
মহামারীর বিস্তার
রোধে নেয়া
লকডাউনের প্রভাবে
সৃষ্ট ২০২০
সালের প্রথম
প্রান্তিকের ঋণাত্মক
প্রবৃদ্ধির কারণে।
তৃতীয় প্রান্তিকের
নিম্ন প্রবৃদ্ধি
চতুর্থ প্রান্তিক
ও পরবর্তী
বছরের প্রবৃদ্ধি
সম্ভাবনা সম্পর্কে
উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
প্রবৃদ্ধি কমার
পেছনে কিছুটা
কাজ করেছে
কভিড-১৯
মহামারী নিয়ন্ত্রণে
চীনের গৃহীত
শূন্য সহনশীলতা
নীতি, যা
অন্য বেশির
ভাগ দেশের
চেয়ে দেশটিতে
অধিক ঘন
ঘন লকডাউন
আরোপে ভূমিকা
রেখেছে। গত
গ্রীষ্মকালে স্থানীয়
পর্যায়ে সংক্রমণ
বৃদ্ধির কারণে
চীনের বহু
শহরে লকডাউন
বা ভ্রমণ
নিষেধাজ্ঞা আরোপ
করা হয়েছিল।
এসব লকডাউন
শুধু পণ্য
উৎপাদন কমায়নি,
বরং চাঙ্গা
হতে যাওয়া
পর্যটনের মতো
অনেক সেবা
খাতকেও মারাত্মকভাবে
ক্ষতির মুখে
ফেলেছে।
তবে দেশটির
প্রবৃদ্ধির অধোগতির
পেছনে মহামারী
একমাত্র ফ্যাক্টর
নয়; আরো
ফ্যাক্টর আছে।
বলতে গেলে
সরকারের সবুজ
শিল্পায়ন নীতি,
ভূমি ও
আবাসন খাতের
কঠোর নীতি
এবং অনলাইন
শিক্ষা প্লাটফর্মগুলো
কালো তালিকাভুক্তি—সবই
সম্মিলিতভাবে দেশটির
প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে।
২০৩০ সালের
আগে চীনে
কার্বন নিঃসরণের
উল্লম্ফন থামানো
এবং ২০৬০
সাল নাগাদ
শূন্য কার্বন
নিঃসরণ লক্ষ্য
পূরণের প্রতিশ্রুতি
অনুসরণ করে
সরকার জোরপূর্বক
প্রায় তাত্ক্ষণিকভাবে
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে
বিদ্যুৎ উৎপাদন
অনেকটা কমিয়েছে।
মাঝে মাঝে
যা কমানো
হয়েছে ২০
শতাংশ পর্যন্তও।
ফলে সৃষ্ট
বিদ্যুিবভ্রাট ক্ষতিগ্রস্ত
কারখানাগুলোয় উৎপাদন
ব্যাহত করেছিল।
অধিকন্তু, ২০২০
সালের আগস্টে
তিনটি রেড
লাইন নীতি
প্রবর্তন করা
হয়েছিল এবং
চলতি বছর
সেগুলোর প্রভাব
আরো তীব্রতর
হয়েছে। ওই
তিন নীতিতে
আবাসন ডেভেলপারদের
ঋণ-সম্পদ
অনুপাত, ঋণ-ইকুইটি
অনুপাত, ঋণ-নগদ
অনুপাতে সর্বোচ্চ
সীমা বেঁধে
দেয়া হয়েছে।
আবাসন খাতের
অনেক প্রতিষ্ঠান
সেসব মানদণ্ড
পরিপূরণ করতে
পারেনি। তদুপরি
ব্যাংক ও
পুঁজিবাজারগুলোও তাদের
নতুন অর্থায়নে
আগ্রহ হারিয়েছিল।
ফলে ওইসব
প্রতিষ্ঠানকে শেষ
পর্যন্ত নিজস্ব
সম্পদ বিক্রি
করতে হয়েছিল,
অপারেশন সীমিত
করতে হয়েছিল
কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে
উভয়টিই করতে
হয়েছিল।
আর্থিক সংকটে
পড়া আবাসন
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে
এভারগ্রান্ডের মতো
বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানও
রয়েছে। যেটি
বারবারই সংবাদের
শিরোনাম হয়েছে।
তবে এটিই
একমাত্র নয়।
আরো অনেক
প্রতিষ্ঠান আর্থিক
চাপে আছে।
আরো আশঙ্কার
দিক হলো,
আবাসন খাতের
অধোগতি সহজেই
ইস্পাত, সিমেন্ট,
গৃহসজ্জা ও
হোম অ্যাপ্লায়েন্স
খাতে ছড়িয়ে
পড়তে পারে।
চূড়ান্তভাবে অনলাইন
শিক্ষাবিষয়ক কোম্পানিগুলোকে
কালো তালিকাভুক্তি,
প্রতিযোগিতাবিরোধী তত্পরতা
বন্ধে নজরদারি
বৃদ্ধি এবং
বিশদভাবে বিধৃত
তথ্য সুরক্ষা
আইনের প্রয়োগ
গত ১২
মাসের বেশি
সময়ে ডিজিটাল
অর্থনীতিভিত্তিক কোম্পানিগুলোর
শেয়ারমূল্য অর্ধেকে
নামিয়ে এনেছে।
এই দ্রুত
পড়তে থাকা
ইকুইটি ভ্যালুয়েশন
সমস্যা-সংকট
শুরুর ইঙ্গিত
মাত্র—যেহেতু
অনেক ডিজিটাল
প্রতিষ্ঠান ও
তাদের সরবরাহকারীরা
নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
ও পরিকল্পনা
কাটছাঁট করেছে।
কয়েকশ অনলাইন
শিক্ষা প্রদানকারী
প্লাটফর্ম বন্ধ
হয়ে গেছে
এবং তারা
কর্মীদের ছাঁটাই
করেছে।
উল্লিখিত নীতির
লক্ষ্যগুলো অবশ্যই
যুক্তিসংগত, তবে
যেভাবে সেগুলো
বাস্তবায়ন করা
হচ্ছে, তাতে
দেশটির অর্থনীতিকে
অনেক বেশি
মূল্য দিতে
হচ্ছে। মহামারীর
টিকাপূর্ব সময়ে
জিরো কভিড
স্ট্র্যাটেজি নিঃসন্দেহে
যৌক্তিক ছিল
এবং তা
গত বছর
চীনকে ধনাত্মক
প্রবৃদ্ধি অর্জনে
সাহায্য করেছিল।
কিন্তু যেহেতু
নতুন নতুন
ধরন আবির্ভূত
হচ্ছে সেহেতু
সব দেশকেই
চূড়ান্তভাবে করোনাভাইরাসের
সঙ্গে বসবাস
করাটা শিখতে
হবে। সৌভাগ্যক্রমে,
টিকাদানের হার
ও স্বাভাবিক
রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায়
অর্থনীতির ক্ষতি
পুষিয়ে নেয়াটাও
ধীরে ধীরে
অনেকটা সামাল
দেয়ার পর্যায়ে
চলে আসছে।
যদি চীন
তার শক্তিশালী
বাস্তবায়ন সক্ষমতার
সদ্ব্যবহার করে
তাহলে সর্বজনীন
কভিড-১৯
টিকাদান নিশ্চিত
করা আরো
সুসংহত, ন্যায়সংগত
হবে (যেহেতু
টিকা না-নেয়া
ব্যক্তিরা অন্যের
ক্ষতির কারণ
হতে পারে)।
তার পরিবর্তে
পর্যায়ক্রমিক লকডাউন,
সীমান্ত বন্ধ
অর্থনীতি এবং
মানুষের জীবনের
জন্য ব্যাপক
বিপর্যয়কর হবে।
সবচেয়ে বড়
কথা, টিকা-পরবর্তী
ধাপে এটা
টেকসই কোনো
কৌশলও নয়।
সবুজ শিল্পনীতির
দিক থেকে
বিদ্যুৎ উৎপাদন
হলো চীনে
সবচেয়ে বেশি
কার্বননিবিড় খাত।
এটা দেশটির
জ্বালানি ভোগভিত্তিক
নিঃসরণের প্রায়
৪০ শতাংশের
জন্য দায়ী।
কাজেই কয়লাভিত্তিক
বিদ্যুতের ওপর
অতিনির্ভরতা দেশটির
জাতীয় ও
বৈশ্বিক নিঃসরণ
হ্রাস প্রচেষ্টায়
মূল্যবান অবদান
রাখে। তবে
পরিবর্তনের প্রভাব
সামলে নেয়ার
জন্য আরো
কিছু ভিন্ন
উপায় আছে।
অর্থনৈতিক সংস্কারে
চীনের নিজস্ব
অভিজ্ঞতা বলে
যে দাম
সংকেত ও
বাজারশক্তির ব্যবহার
কাঠামোগত পরিবর্তনের
ক্ষয়-ক্ষতি
কমাতে পারে।
বিশেষ করে
চীনে উচ্চমাত্রায়
কার্বন কর
বৃদ্ধি এবং
পর্যাপ্ত লিড
টাইমের সঙ্গে
একটা অনুমানযোগ্য
মূল্য পথের
ঘোষণা বিদ্যুৎ
উৎপাদক এবং
ব্যবহারকারীদের সমন্বয়
ও ভালোভাবে
অভিযোজনে সমর্থ
করে তুলবে।
এভাবে অনেক
কম জিডিপি
প্রবৃদ্ধি হারানোর
মাধ্যমে দেশটি
সমপরিমাণ কার্বন
নিঃসরণ কমাতে
পারবে। তদুপরি
এ ধরনের
অ্যাপ্রোচ দেশটির
উত্তর-পূর্ব
অংশের অনেক
পরিবারসহ চীনা
পরিবারগুলোর জন্যও
কম বিপর্যয়কর
হবে; যারা
ঘরের উষ্ণতা
বৃদ্ধি এবং
বিদ্যুৎ সরবরাহ
সম্পর্কে উদ্বিগ্ন
হতে পারে,
যেহেতু দেশটিতে
এখন শীত
মৌসুম চলমান।
একইভাবে আবাসন
খাতে কঠোর
নীতি গ্রহণ
ফাটকামূলক মূল্যবৃদ্ধি
সীমিত করা
একটি কাঙ্ক্ষিত
লক্ষ্য হলেও
আবাসন উন্নয়ন
বাধাগ্রস্ত করে
আবশ্যিকভাবে ওই
লক্ষ্য অর্জন
খুব একটা
সহায়ক হবে
না। আবাসন
ও নির্মাণ
খাত চীনা
অর্থনীতির ৩০
ভাগ ওঠানামার
জন্য দায়ী।
সুতরাং এ
বাস্তবতায় একটি
বিকল্প পথের
সন্ধান ও
সমন্বয় আলোচ্য
খাতের চাপ-ব্যথা
অনেকটা প্রশমন
করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, নিম্ন
আয়ের পরিবার
এবং গ্রাম
থেকে শহরে
আসা পরিবারগুলোর
আরো সাশ্রয়ী
আবাসনের ব্যবস্থা
করা। এটা
করা হলে
তা আসবাব,
অ্যাপ্লায়েন্স, ইস্পাত
ও সিমেন্টের
চাহিদা বাড়াতে
পারে। স্তিমিত
চাহিদা পরিবর্তন
নাটকীয় মাত্রায়
করতে পারে।
স্কুল-পরবর্তী
শিখন কর্মসূচির
নিয়ন্ত্রণ সৃজনশীলতা
ও শরীরচর্চা
সামর্থ্য বাড়ানোমূলক
কর্মকাণ্ডে যুক্ত
হতে শিশুদের
পর্যাপ্ত সময়
দেবে এবং
পরিবারগুলোর আর্থিক
বোঝা কমাবে,
যারা আগে
শিশুদের অনলাইন
শিক্ষা আধেয়
বা উপকরণ
কিনতে চাপ
অনুভব করেছিল।
কাজেই নতুন
বিধিমালার প্রশংসনীয়
সামাজিক যুক্তি
রয়েছে। অবশ্য
তুলনামূলক কম
সময়ের মধ্যে
এর বাস্তবায়ন
কেবল অনলাইন
শিক্ষার প্লাটফর্মগুলোর
মুনাফা, শেয়ারমূল্য
ও কর্মসংস্থান
কমাবে তা
নয়, উপরন্তু
অন্য খাতে
আকস্মিক নীতি
পরিবর্তনের ঝুঁকি
বৃহত্তর বিনিয়োগ
আস্থা ও
মনোভাবেও চিড়
ধরাতে পারে।
চীন বিনিয়োগকারীদের
আস্থা পুনরুদ্ধার
করতে এবং
তার সম্ভাব্য
প্রবৃদ্ধি হারে
নিঃসন্দেহে ফিরতে
পারবে। সেটি
করতে হলে
দেশটিকে অবশ্যই
গৃহীত সংস্কার
থেকে সুফল
পাওয়া নিশ্চিত
করতে হবে
এবং তা
করতে হবে
নতুন বিধিমালা
ও মহামারী
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলো
যতটা সম্ভব
বিতর্কিত না
করেই। এ
দিকটা দেশটির
রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বকে
বিশেষভাবে মনে
রাখতে হবে
বৈকি।
[স্বত্ব:
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
]
শ্যাং-জিন
ওয়েই: এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট
ব্যাংকের মুখ্য
অর্থনীতিবিদ; কলাম্বিয়া
বিজনেস স্কুলের
ফাইন্যান্স ও
অর্থনীতির অধ্যাপক
ভাষান্তর: হুমায়ুন কবির