নাজিবা বাশার পেশায় সাংবাদিক, অভিনেত্রী। মা-বাবা দুজনেই ছিলেন থিয়েটারকর্মী। তাদের ইচ্ছায় অভিনয়ে আসা। নাটক ও বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তার অভিনীত একদিন, বেঙ্গলি বিউটি, নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার, মনের মতো মানুষ পাইলাম না সিনেমাগুলো মুক্তি পেলেও কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানভীর মোকাম্মেলের মুক্তি প্রতীক্ষিত রূপসা নদীর বাঁকেতে। কাজ করছেন ওয়েব সিরিজেও। সম্প্রতি আমাদের বাড়ি নামে একটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে ভারতীয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম জিফাইভে। নিজের অভিনয়, পেশাগত জীবন নিয়েও কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
ওয়েব সিরিজ ‘আমাদের বাড়ি’তে আপনার চরিত্রটি সম্পর্কে বলুন।
ওয়েব সিরিজে আমার চরিত্রের নাম লায়লা বেগম। বাড়ির মালিক আনোয়ার সাহেবের স্ত্রী। ওই পরিবারের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্রটি লায়লা বেগম। এর বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। বাকিটুকু দর্শক ওয়েব সিরিজ দেখে বুঝতে পারবে। প্রথম পর্ব থেকেই দর্শক বুঝতে পারবে লায়লা বেগম কেন রহস্যময়।
এ ওয়েব সিরিজে যুক্ত হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই।
ওয়েব সিরিজটি বানিয়েছে ডোপ প্রডাকশনস। এর পরিচালক কাজী রাহাত। তাদের সঙ্গে আমার আগে থেকেই সুসম্পর্ক। আমরা আগেও কাজ করেছি। তারা আমাদের পরিবারের মতোই। যখন কোনো চরিত্র আমার সঙ্গে যায়; আমি তা যথাযথভাবে করতে পারব বলে মনে করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এভাবেই ‘আমাদের বাড়ি’তে যুক্ত হওয়া।
‘আমাদের বাড়ি’
নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?
আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনে অনেক পারিবারিক কাহিনীর নাটক উপভোগ করত দর্শক। তথন বহুব্রীহি, আজ রবিবারের মতো কালজয়ী নাটক হয়েছে। ওই ধাঁচের পারিবারিক কমেডি উপভোগ করতে পারবে। এ ওয়েব সিরিজে তরুণ প্রজন্মের দর্শক পারিবারিক নাটকের স্বাদ পাবে বলে আশা করি। বহু বছর পর এমন একটি কাজ হচ্ছে।
১৯০টি দেশের দর্শক ওয়েব সিরিজটি দেখবে, এটা ভেবে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করেছেন?
চাপ ঠিক বলব না। এটা গর্বের ব্যাপার। ‘আমাদের বাড়ি’
টিমের আমরা সবাই সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করেছি, দিয়েছি। আমি গর্ববোধ করছি, এ ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে উপস্থান করতে পারছি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। এটি ফ্যামিলির সঙ্গে পপকর্ন খেতে খেতে দেখার মতো শো। আমরা আশা করছি দর্শক ওয়েব সিরিজটি ইতিবাচকভাবে নেবে, উপভোগ করবে।
অভিনয় নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী? নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ কোন মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান?
আমার লক্ষ্য আসলে ভালো গল্প। প্লাটফর্মটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। ভালো চরিত্র, ভালো গল্পের খোঁজে থাকি আমি।
আপনার মা-বাবা থিয়েটারশিল্পী। তাদের সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে বাড়তি কোনো সুবিধা বা চাপ থাকে?
মা-বাবা দুজনই সুশৃঙ্খল অভিনেতা। কারণ তারা থিয়েটারশিল্পী। তাদের সঙ্গে কাজ করতে গেলে আমি চেষ্টা করি সুশৃঙ্খলভাবে এবং নিজের সেরাটা দিয়ে অভিনয় করতে। আর যখন আমরা একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই, তখন একে-অন্যের সহশিল্পী হিসেবে বিবেচনা করি, পারিবারিক পরিচয়ের বাইরে। ক্যামেরার সামনে আমাদের রসায়ন আলাদা থাকে, ক্যামেরার বাইরে ভিন্ন।
আপনি সাংবাদিকতায় যুক্ত। এ পেশায় কাজ করতে গিয়ে ব্যতিক্রমী কোনো অভিজ্ঞতা?
দ্য ডেইলি স্টার থেকে আমরা একটা শো করি ‘স্ট্রেইট ফ্রম স্টার নিউজরুম’
নামে। সেখানে দেশের সমসাময়িক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। যখন আমরা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করি, দর্শক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আলোচনায় আগ্রহী থাকে না, বরং আমরা কী পোশাক পরেছি, ওড়না পরিনি কেন? কোন রঙের পোশাক পরেছি—এগুলোয় বেশি আগ্রহী থাকে। এসব নিয়ে মন্তব্য করেন।
আপনি খবরের মানুষ। অভিনয়ের সুবাদে এখন নিজেই খবর। বিষয়টা উপভোগ করেন?
সাংবাদিকতায় যুক্ত আমি ১২ বছর ধরে। আর অভিনয়ে আট বছর। শুরুর দিকে একটু অদ্ভুতই লাগত। আমার পত্রিকায় আমার অভিনয়ের নিউজ ছাপা হচ্ছে, আমার পত্রিকায় আমাকে নিয়ে লেখা নিউজ পড়ছি। আগে আমি বিনোদন সাংবাদিকতা করতাম। এমনও দিন গেছে, নিজের অভিনয়ের নিউজ আমাকে লিখতে হচ্ছে। শুরুর দিকে একটু অদ্ভুত লাগত। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
আমি নিজেকে সুখী দেখতে চাই। নিজের মা-বাবাকে খুশি ও গর্বিত দেখতে চাই।
জিফাইভের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
জিভাইভের সঙ্গে এটি আমার দ্বিতীয় কাজ। এর আগে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলাম। তবে সেখানে কাজের জায়গাটা কম ছিল। জিভাইভ নিয়ে আমার আশার জায়গাটা হলো, তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভিন্ন ঘরানার কনটেন্ট নির্মাণ করছে বাংলাদেশের দর্শকের সঙ্গে। অভিনেতা হিসেবে আমিও জিভাইভের সঙ্গে ভিন্ন ঘরানার কাজ করতে পারব। একটা ঘরানায় আটকে থাকব না।