একদিনে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ব্যারেলে ১০ ডলার

উদ্বেগ নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ওপেক প্লাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুই সপ্তাহ ধরেই নিম্নমুখী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও দরপতনের গতি ছিল শ্লথ। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের খবরে শুক্রবার এক লাফে ব্যারেলে ১০ ডলার করে কমে যায় পণ্যটির দাম। গত বছরের এপ্রিলের পর একদিনে সবচেয়ে বড় দরপতন এটি। এদিকে বাজারে ধস নামায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর মিত্র জোট ওপেক প্লাস।

ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন পণ্য পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, এটির প্রভাবে পুনরুদ্ধার হতে শুরু করা বৈশ্বিক অর্থনীতি আবারো ভেঙে পড়তে পারে। তলানিতে ঠেকতে পারে জ্বালানি পণ্যের চাহিদা। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পণ্যটির বাজারে বড় আকারের উদ্বৃত্তের উদ্বেগও ঘনীভূত হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেয়া তথ্যমতে, শুক্রবার আইসিই ফিউচার্স ইউরোপে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ডলার ৫০ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি ৭২ ডলার ৭২ সেন্টে স্থির হয়েছে। আগের কার্যদিবসের তুলনায় দাম কমেছে ১১ দশমিক শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে শতাংশেরও বেশি।

একই দিন নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ১০ ডলার ২৪ সেন্ট কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৬৮ ডলার ১৫ সেন্টে, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৩ দশমিক শতাংশ কম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ১০ দশমিক শতাংশেরও বেশি।

ওপেক প্লাস করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ওমিক্রনের সংক্রমণ প্রবাহ জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতিকে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে অনেক বেশি ভারসাম্যহীন করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো।

ওপেকের এক প্রতিনিধি শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন আসলে আন্তর্জাতিক বাজারে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। তবে ওপেক প্লাসের অন্যতম সদস্য রাশিয়া এখনো নতুন ধরনটি নিয়ে কোনো রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।

চলতি বছর থেকে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদায় পুনরুদ্ধার ঘটছে। জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের প্রত্যাশা, আগামী বছরের মধ্যে দৈনিক ১০ কোটি ব্যারেলের গণ্ডি স্পর্শ করার মাধ্যমে মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে যাবে বৈশ্বিক চাহিদা। তবে নতুন ধরনটির সংক্রমণ প্রবাহ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা উল্টো দিকে মোড় নিতে পারে। পর্যাপ্ত সরবরাহের মধ্যেই চাহিদায় ভাটা পড়লে বাজারে ধস নামবে।

তথ্য বলছে, বছরের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে ওপেক ওপেক প্লাসের প্রতি উত্তোলন বাড়ানোর আহ্বান জানায় মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু ওপেক প্লাস আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। জোটটি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে দৈনিক চার লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন বাড়ানোর সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাতেই অটল রয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে উত্তোলনের হার কেমন হবে, তা নির্ধারণ করতে ডিসেম্বর জোটটির নীতিনির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে উত্তোলন বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর জো বাইডেন বেশ কয়েকটি দেশকে সম্মিলিতভাবে কৌশলগত মজুদ (এসপিআর) থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল বিশ্ববাজারে সরবরাহের আহ্বান জানান। এতে সাড়া দিয়েছে চীন জাপানসহ কয়েকটি দেশ। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে।

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বি...৫২৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নতুন ধরনটির নামকরণ করেছে ওমিক্রন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনো পর্যন্ত খুবই স্বল্পমাত্রায় ওমিক্রনের সংক্রমণ ঘটেছে। প্রধানত দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হলেও বতসোয়ানা, হংকং ইসরায়েলেও এটির অস্তিত্ব মিলেছে। ধরনটি আগের যেকোনো ধরনের চেয়ে অনেক বেশি মিউটেশন ক্ষমতাসম্পন্ন। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে যেসব দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে সেসব দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন