খুলনায় বেড়েছে বীজধানের দাম, দুশ্চিন্তায় কৃষক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

বোরো মৌসুম উপলক্ষে খুলনায় শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরির কাজ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সামনেই বোরো ধান চাষের মৌসুম। এরই মধ্যে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরির কাজ। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বীজধান। কেজিপ্রতি ১১-১৫ টাকা বেড়ে খুলনায় বীজধান মানভেদে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সেচ মেশিন চালানোর মূল উপাদান জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে বীজধানের দামও। এতে ধান উৎপাদনে খরচ বাড়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এবার ৫৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হবে বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

কৃষকরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে টানা আট মাস অনাবৃষ্টি, কালবৈশাখী, লবণাক্ততা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বোরো আবাদ অনুকূলে ছিল না। সেচ দিয়ে সতেজ রাখতে হয়েছিল জমি। বিদ্যুৎ সংকটে সেচযন্ত্রে ডিজেল ব্যবহার করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাছাড়া মাজরা পাতামোড়ানো পোকার আক্রমণ এবং ইউরিয়া সারের সংকটে কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েন।

চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চারা প্রস্তুত মৌসুম শুরু হয়েছে। চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে উৎপাদন খরচ নিয়েই এখন তাদের যত দুশ্চিন্তা। কারণ সেচকাজে ব্যবহারের মূল উপাদান ডিজেলের পাশাপাশি বেড়েছে ধানবীজের দাম।

ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আর গতবারের তুলনায় সরকারি বোরো ধানবীজের দাম কেজিপ্রতি ১১-১৫ টাকা বেড়েছে। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি বীজ ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন জেলার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা, দীঘলিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বোরো ধান চাষের বীজতলা তৈরি শুরু করেছেন কৃষকরা।

জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের কৃষক মঞ্জুর শেখ হোসেন জানান, ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ টাকা, বীজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১১-১৫ টাকা। বীজের দাম বাড়ার কারণে তিনি এখনো বীজ বুনতে পারেননি। অপরদিকে বোরো চাষে সেচ গুরুত্বপূর্ণ। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচে খরচ এবার আরো বাড়বে।

গুটুদিয়া ইউনিয়নের কৃষক আজহারুল বলেন, শ্যালো কিংবা সেচ মেশিন চালাতে ডিজেলের প্রয়োজন। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচ খরচও বাড়বে। সবমিলিয়ে ধান উৎপাদনে খরচ গতবারের তুলনায় বাড়বে। সেই হিসাবে দাম না পেলে কৃষক সর্বস্বান্ত হবেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন জানান, কৃষকের সমস্যা লাঘবে কৃষি বিভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ সার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় ভালো ফলন পাবেন। 

বিএডিসি (বীজ) খুলনার উপ-সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, কোনো অবস্থাতেই বীজের সংকট হবে না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার বীজের দাম বেড়েছে। বীজতলা শুরুর আগেই জেলা, উপজেলা পর্যায়ের ডিলারদের কাছে চাহিদামতো বীজ পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার ফুলতলা বীজগুদামে বিআর-২৮, ৫৫, ৬৩, ৬৭, ৮১, ৮৪, ৮৬, ৮৮, ৮৯, বিনা-, , ১০, ১৪, বিআর-, ১৪, ১৬, ২৬ জাতের বীজ এসেছে। তবে বৃহত্তর খুলনায় বিআর ২৮ জাতের চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন