গোয়ালন্দে চুরির অপবাদে যুবককে আটকে রেখে নির্যাতন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে রাসেল শেখ (২০) নামের এক যুবককে অমানুষিক নির্যাতন করে ছয়দিন আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য উসমান কাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।

রাসেল গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতদিয়া সৈদালপাড়ার নজরুল শেখের ছেলে। ঘটনায় রাসেলের খালা শুকুরজান বেগম (৫০) বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা করেছেন। এদিকে উদ্ধারের পর ইউপি সদস্যের লোকজনের হাতে মারপিটের শিকার হয়েছে রাসেলের পরিবার।

নির্যাতনের শিকার যুবক রাসেল জানান, তিনি ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার বাবা মানসিক রোগী। মা কয়েক দিন আগে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে গেছেন। সৌদি আরবে যাওয়ার আগে চলতি মাসের প্রথম দিকে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় ফেরার সময় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ইউপি সদস্য উসমান কাজীর নেতৃত্বে কয়েক যুবক তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা দৌলতদিয়া কফিল উদ্দিন তেলের পাম্পের দোতালায় নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে বলে তুই অটোরিকশা চুরি করেছিস। সময় সে কোনো চুরির সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করলে তারা আরো নির্যাতন চালায়। কোনোভাবেই সে স্বীকার না করায় তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নৌকা করে পদ্মা নদীতে নিয়ে যায় এবং বলে যাদের নাম বলতে বলব তাদের নাম তুই বলবি, আর তা না হলে তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে দিব। এক পর্যায়ে সে প্রাণভয়ে তাদের বলে দেয়া নাম বলে এবং তারা সেটি ভিডিও করে রেখে ছেড়ে দেয়।

পরিস্থিতিতে গত ২০ নভেম্বর দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অটোরিকশা চুরির বিচার বসে। সেখানে হাজির হন রাসেল। রাসেলের স্বীকারোক্তির ওই ভিডিও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হলে চুরিতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে এক ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয় এবং কোনো রায় ছাড়া বিচার শেষ হয়। এরপর উসমান কাজী রাসেলকে নিয়ে এসে তার বাড়িতে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। রাসেল বলেন, আমাকে আটকে রেখে খেতেও দেয়নি। খাবার চাইলেই শুরু হতো অমানুষিক নির্যাতন।

রাসেলের খালা শুকুরজান বেগম জানান, এক ব্যক্তির পরামর্শে তিনি শুক্রবার রাতে ৯৯৯- ফোন করে জানান। পরে ওই রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ রাসেলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সময় মকবুল কাজী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য উসমান কাজী বলেন, রাসেল যে অটোরিকশা চুরি করেছে তা স্বীকারও করেছে। তার পরও একজনকে এভাবে আটক রাখতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচার সভায় উপস্থিত গোয়ালন্দ পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল, দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মোল্লাসহ সবাই অভিযুক্ত রাসেলকে আমার জিম্মায় দেন। আমি তাদের অনুরোধেই রাসেলকে আমার বাড়িতে রেখে দিই।

দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল জানান, বিচার সভায় কাউকে আটকে রাখার কথা বলা হয়নি। কী কারণে উসমান কাজী তাকে আটকে রেখেছিলেন তা আমার জানা নেই।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন