কভিডের নতুন ধরন শনাক্ত

‘ওমিক্রন’ ছড়ানোর শঙ্কায় ফিরছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি সপ্তাহেই দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বি...৫২৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নতুন ধরনটির নামকরণ করেছে ওমিক্রন বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধরনটি আগের যেকোনো ধরনের চেয়ে দ্রুত মিউটেশন ক্ষমতাসম্পন্ন। আবার কভিড-১৯ প্রতিরোধী যে টিকাগুলো এখন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলোও এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের দেশগুলোর মূল চিন্তার কারণ নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর জাপান এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা এর আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন নীতিমালাও কঠোর করা হয়েছে। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা নয় পুরো অঞ্চলটি থেকেই আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বি...৫২৯ ধরনটিতে একটি স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, যেটি নভেল করোনাভাইরাসের মূল ধরন থেকে একদমই আলাদা। এমনকি ডেল্টা বা বেটার সঙ্গেও এর কোনো মিল নেই। অথচ ভাইরাসটির মূল ধরনের ওপর নির্ভর করেই প্রতিষেধক বা প্রতিরোধী ওষুধ টিকা তৈরি করা হয়েছে। তাই সেসব টিকা নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে আদৌ কাজ করবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। আবার এটি কতটুকু সংক্রামক সেটিও এখনো অজানা। এসব বিষয় জানতে কাজ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আরো কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে কয়টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে তার বেশির ভাগই পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে হংকং, ইসরায়েল বতসোনায়াতেও মিলেছে নতুন ধরনের খোঁজ। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার যে অঞ্চলে ধরন শনাক্ত হয়েছে সেই গোতেং প্রদেশ দারুণ জনবহুল। দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৪ শতাংশকে পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকার আওতায় আনা হয়েছে। হংকংয়ে ধরন ছড়িয়েছে এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে যিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকা নেয়া ব্যক্তি। ফলে এটির ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা অনেক বেড়ে গেছে।

ভাইরাসটি অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কিছু দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, জাপান নেদারল্যান্ডস সাময়িকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, এসোয়াতিনি লেসোথোর সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ বন্ধ করেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর, ইতালি, ফ্রান্স ইসরায়েল দেশগুলোর সঙ্গে মোজাম্বিককেও যুক্ত করেছে।

চেক রিপাবলিক জানিয়েছে, কেউ যদি এসব দেশে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় কাটায় তাহলে তাকে আর দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে নভেল করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ কাটিয়ে উঠতে না পারা জার্মানি নতুন ধরনের বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন শুরু করেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কেবল জার্মানির নাগরিকরাই দেশে প্রবেশ করতে পারবেন। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পুরো অঞ্চলের ওপরই জরুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ কভিড-১৯-এর সবশেষ ঢেউটির সঙ্গেই এখনো মানিয়ে উঠতে পারেনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তার ওপর যদি নতুন ধরনটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা মোকাবেলা করা অঞ্চলের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা হংকং থেকে আসা ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করেছে ভারত।

এদিকে হঠাৎ করে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আসন্ন ছুটির মৌসুম নিয়ে চিন্তিত দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যান্য দেশের মধ্যে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত নেয়া হয়েছে বলে মনে করছে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় দেশটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, সরকারগুলোর উচিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে ঝুঁকিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা।

অবশ্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়েও গবেষকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কিছু গবেষক মনে করছেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরো আগেই দেয়া উচিত ছিল। কারণ ভাইরাসটি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেন কলিং বলেন, সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সম্ভবত বেশ দেরি হয়ে গেছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ল্যাসেলস বলেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কোনো সমাধান নয়। উচিত ছিল আরো বেশি মানুষ যেন টিকার আওতায় আসে সে পদক্ষেপ নেয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন