হিলিতে ধানের দরপতনে হতাশ কৃষক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

হিলিতে ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চলতি মৌসুমে আমন ধানে নানা ধরনের রোগ পোকামাকড়ের আক্রমণ হলেও ভালো ফলন পেয়ে খুশি হয়েছিলেন কৃষকরা। শুরুতে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ ধানের দাম মণপ্রতি ৫০-১০০ টাকা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়েছেন বলে দাবি তাদের। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন বিভিন্ন কোম্পানি ধান ক্রয় বন্ধ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

হিলির বিভিন্ন এলাকায় মাঠজুড়ে চলছে এখন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। এরই মধ্যে মাঠের তিন ভাগের দুই ভাগের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকিটা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হবে। বর্তমানে হিলির বিভিন্ন হাটে ধান বেচাকেনা চলছে প্রতি মণ গুটি স্বর্ণা ৯৫০ টাকা, যা আগে হাজার থেকে হাজার ১০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আর স্বর্ণা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে হাজার ১০ টাকা পর্যন্ত, যা এক সপ্তাহ আগে হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।

হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুরের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, একে তো এবার আমন ধান লাগানোর সময় থেকেই আমাদের বিপদ। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সেচের মাধ্যমে ধান আবাদ করতে হয়েছিল। পরে সময়মতো সার কীটনাশক দেয়ায় ধানগাছ বেশ বেড়েছিল। কিন্তু যখন ধানের শীষ বের হবে, তখন দেখা দেয় মাজরা, কারেন্টসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ।

নিজের অভিজ্ঞতা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে সে আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় ধানক্ষেত। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার আমাদের খরচ কিছুটা বাড়তি হয়েছে। বছর ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। গতবার যেখানে বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ ধান উৎপাদন হয়েছিল, এবার সেখানে ১৪-১৫ মণ করে ধান উৎপাদন হচ্ছে।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ধান কাটা মাড়াই খরচ বেড়ে গেছে। এর পরও সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি - হাজার টাকা লাভ হতো। কিন্তু হঠাৎ ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। যে স্বর্ণা ধানের দাম হাজার ১০০ টাকায় উঠেছিল, এখন তা কমে হাজার টাকায় নেমেছে। আর গুটি স্বর্ণা ধানের দাম ৯৫০ টাকায় নেমেছে। ধানের দাম যদি এভাবে কমতে থাকে, তাহলে লাভ তো দূরের কথা লোকসানে পড়তে হবে।

হিলির ছাতনি চারমাথা মোড়ের ধানের আড়তদার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কয়েকদিনের তুলনায় ধানের দাম বর্তমানে কিছুটা কমছে। এর মূল কারণ হলো ক্রেতা সংকট। আমরা ধান ক্রয় করে যেসব মোকামে সরবরাহ করতাম, সেগুলোয় এখন আবার ক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন আগে ধান কাটা-মাড়াই শুরুর পর বিভিন্ন মোকামে ধান ক্রয় করতে শুরু করেছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন বড় কোম্পানিগুলো ধান ক্রয় করছিল। বিশেষ করে সিটি গ্রুপ প্রচুর পরিমাণে ধান ক্রয় করছিল। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ ট্রাক ধান কেনে গ্রুপটি। কিন্তু সম্প্রতি তাদের মিলে আগুন লাগার কারণে ধান ক্রয় বন্ধ রেখেছে। আপাতত কিছুদিন ধানের বাজার এমন থাকবে। তবে তারাসহ অন্যান্য মোকামে ধান ক্রয় শুরু হলে ধানের বাজার বাড়বে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন