সদ্য সমাপ্ত টি২০ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ থেকে বাদ পড়েন মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ভালো করতে না পারলেও লাল বলে এ দুজনের সামর্থ্য নিয়ে কারো প্রশ্নই ছিল না। তার প্রমাণও দিলেন। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুশফিক-লিটনের যুগলবন্দিতে বিপর্যয় কাটিয়ে প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ। লিটনের হার না মানা সেঞ্চুরি ও মুশফিকের হার না মানা ৮২ রানে ভর করে দিনশেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৩ রান।
৪৯ রানে ৪ উইকেট পতনের পর সাগরিকায় স্বাগতিকদের মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়। যদিও ২০৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ভরাডুবি থেকে দলকে রক্ষা করলেন লিটন ও মুশফিক। কাল প্রথম দিনের খেলা শেষে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকরা তো বটেই, পাকিস্তানি খেলোয়াড়রাও লিটনকে অভিনন্দন জানান। পেস বোলার হাসান আলী তো আলিঙ্গনও করলেন লিটনের সঙ্গে।
সকালের সেশনে ৫৮ মিনিটের মধ্যে চার-চারটি উইকেট তুলে নিলেও এরপর মুশফিক-লিটনের ব্যাটে দীর্ঘ যন্ত্রণা অতিথি দলের। এরপর আড়াই সেশনেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানকে হতাশায় ডুবিয়েছেন এ দুজন। তাদের ব্যাটে ভর করে শুধু যে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ তা-ই নয়, এর ওপর দাঁড়িয়ে স্বাগতিকরা এখন বড় সংগ্রহের সুযোগও পেয়েছে।
গতকালের ‘ত্রাতা’ মুশফিক ও লিটন সপ্তাহখানেক আগেও ছিলেন বাংলাদেশ দলে ব্রাত্য! তা অবশ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করণে। বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে মুশফিক করেন ১৪৪ রান, আর সমান ইনিংসে লিটনের ব্যাট থেকে আসে ১৩৩ রান। দুজনই বাদ পড়েন পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে, যে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। নির্বাচকরা ‘বিশ্রাম’ দিয়েছেন বলে দাবি করলেও মুশফিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, আসলে বাদ পড়েছেন। লিটন নীরবে নিজেকে তৈরি করে গেছেন।
এবার ব্যাটেই জবাব দিলেন মুশফিক ও লিটন। কাল টস জিতে ব্যাটিং নেয়া বাংলাদেশ ৩৩ রানের মধ্যেই হারায় দুই ওপেনার সাইফ হাসান (১৪) ও সাদমান ইসলামকে (১৪)। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আবিদ আলীকে ক্যাচ দিয়েছেন সাইফ, আর হাসান আলীর বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সাদমান। নিজের সেরা টেস্ট ভেন্যুতে ব্যর্থ হলেন মুমিনুল হক (৬), তিনি অফ স্পিনার সাজিদ খানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। পরের ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে সাজিদ খানকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪)।
১৭তম ওভারে টপ অর্ডারের এ চারজনের বিদায়ে ঘোর বিপদে পড়ে বাংলাদেশ (৪৯/৪)। ব্যাটিংয়ে তখন মুশফিক আর লিটন। এ দুজন বাদে স্বীকৃত ব্যাটার বলতে বাকি শুধু অভিষিক্ত ইয়াসির আলী। এমন কোণঠাসা পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে দলকে বের করে এনেছেন মুশফিক আর লিটন। দুই ডানহাতি ব্যাটার টি২০ বিশ্বকাপ ও সর্বশেষ টি২০ সিরিজের দুঃখ ভুললেন প্রতিটি রক্ষণে, প্রতিটি রানে; আর দলকে নিয়ে গেলেন নিরাপদ স্থানে।
দুজনের দৃঢ়তায় ২৮ ওভারে ৬৯ রান তুলে মধ্যাহ্নভোজে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে ৩১ ওভার খেলে তারা বোর্ডে যোগ করেন ১০২ রান। শেষ সেশনে আলোকস্বল্পতায় আগেভাগে খেলা শেষ হয়। তার আগে এ দুজন ২৬ ওভার খেলে বাংলাদেশকে এনে দেন আরো ৮২ রান। সব মিলিয়ে দলের সংগ্রহ ২৫০ পার হয়। দুজনের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে সকালের শঙ্কা তাই বিকালে রূপ নেয় স্বস্তিতে।
সকালের কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে ৬৮ দশমিক ৪ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ দলকে স্বস্তিদায়ক জায়গায় পৌঁছে দেন মুশফিক ও লিটন। তাদের ২০৪ রান পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি। ২০১৫ সালে খুলনায় ৩১২ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস।
সাগরিকার সবুজে ছবির মতো সুন্দর ক্রিকেট খেলেছেন মুশফিক ও লিটন। ছোটখাটো ভুলগুলো বাদ দিলে নিখাদ টেস্ট ব্যাটিং করেন এ দুজন। এ পথে লিটন তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। নুমান আলীর করা ৭৮তম ওভারের তৃতীয় বলটি মিড অফে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। তার সেঞ্চুরি আসে ১৯৯ বলে।
বাংলাদেশকে বাঁচানো এ জুটিতে ২১ বাউন্ডারি ও এক ছক্কা মেরেছেন লিটন ও মুশফিক। দুজনের ২০৪ রানের পার্টনারশিপের মধ্যে লিটনের অবদান ১১৩, আর মুশফিকের ৮২। মুশফিক ১০ বাউন্ডারির সাহায্যে ১৮৮ বলে ৮২ রান করেন, লিটন ১১ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় সাজিয়েছেন ১১৩ রানের ইনিংসটি, খেলেছেন ২২৫ বল।
ক্রমেই বড় হতে থাকা মুশফিক ও লিটনের জুটি ভাঙতে সব অস্ত্রই ব্যবহার করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। এর মধ্যে বাঁহাতি অর্থোডক্স বোলার নুমান আলী ও ডানহাতি অফ স্পিনার সাজিদ খান মিলে ৪৪ ওভার বল করে কাবু করতে পারেননি এ দুজনকে।
দিনের খেলা শেষে পাকিস্তানের পেসার হাসান আলীর অকপট স্বীকার, কতগুলো উইকেট তুলে নেয়ায় প্রথম সেশনটি আমাদের ভালোই কেটেছে। এরপর লিটন ও মুশফিক যেভাবে ব্যাট করেছে তার প্রশংসা করতেই হয়। তারা সত্যিই খুব ভালো খেলেছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ওরা যেভাবে খেলছে, তাতে ওদের ৩৫০ রানের মধ্যে আটকে দিতে পারলে অসাধারণ হবে।
তিনি আরো বলেন, এটা বেশ ধীরগতির পিচ, কাজেই জুটি ভাঙতে হলে আমাদের ভালো জায়গায় বল করতে হবে। আর আমাদের ব্যাটাররা ভালো ফর্মে আছে এবং এ পিচে ভালো স্কোর গড়ার সামর্থ্য তাদের রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস
প্রথম দিন শেষে: ৮৫ ওভারে ২৫৩/৪ (লিটন ১১৩*, মুশফিক ৮২*; হাসান ১/৩৮, ফাহিম ১/৩৮, আফ্রিদি ১/৫০, সাজিদ ১/৬৮)।