বিশ্বব্যাপী চাল রফতানিকারকের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। বর্তমানে এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ স্থান অর্জনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে আরেক রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ড। অক্টোবরে টানা পাঁচ মাসের মতো থাইল্যান্ডের চাল রফতানির পরিমাণ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে। রফতানির ধারায় এ অগ্রগতি দেশটিকে চলতি বছরে দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারকের খেতাব পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য দূরত্ব অতিক্রমে সাহায্য করেছে। থাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অক্টোবরে দেশটির চাল রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৩ টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর থেকে মাসিক রফতানির পরিমাণ অনুসারে এটি সর্বোচ্চ চাল রফতানির পরিমাণ। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত থাইল্যান্ডের চাল রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ লাখ ৯০ হাজার টন। তবে বিশ্বব্যাপী চাল রফতানির তালিকায় বাধাহীন শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ভারত। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের চাল রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৩ লাখ টন। ফলে শীর্ষ রফতানিকারকের খেতাব ধরে রাখার পাশাপাশি চাল রফতানির বৈশ্বিক পরিমাণের দুই-পঞ্চমাংশের দখল বজায় রেখেছে ভারত। ২০২০ সালে ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডের খেতাব কেড়ে নেয় ভিয়েতনাম।
ভিয়েতনাম কাস্টমসের তথ্যানুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির চাল রফতানির পরিমাণ একই সময়ে থাইল্যান্ডের রফতানীকৃত চালের চেয়ে ৫ লাখ ৯২ হাজার টন বেশি। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে ভিয়েতনামে কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর লকডাউন সত্ত্বেও চাল রফতানিতে এ সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চলতি বছরও দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রফতানিকারকের খেতাব বজায় রাখতে সক্ষম হবে। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চাল রফতানিতে আকর্ষণীয় পরিমাণ অগ্রগতি সাধন করেছে থাইল্যান্ড। মার্চে থাইল্যান্ডের চাল রফতানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এ সময় দেশটির চাল রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২ হাজার ৬৬৯ টন। তবে মার্চের তুলনায় অক্টোবরে থাইল্যান্ডের চাল রফতানির পরিমাণ ১৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিপাইনের সরকার দেশটির আমদানিকারকদের জন্য ফাইটোস্যানিটারি লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে এ লাইসেন্স আমদানিকারকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় ডিসেম্বরে ভিয়েতনামের চাল রফতানিতে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানিকারকদের মধ্যে ফিলিপাইন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চাল রফতানিকারক হিসেবে থাইল্যান্ডের পুনরুত্থানের অন্যতম কারণ দেশটির মূল্য প্রতিযোগিতায় ফিরে আসা। ফেব্রুয়ারিতে থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাঙা সাদা চালের মূল্য একই মানের ভারতীয় চালের তুলনায় প্রতি টনে সর্বোচ্চ ১৩৭ ডলার মূল্যায়ন করা হয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবরে উভয় চালই বাজারে বজায় থাকার ফলে নিজেদের চালের দাম কমিয়ে আনে থাইল্যান্ড। একই সঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে রফতানির বাজারে অবস্থান দৃঢ় করে তোলে দেশটি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে থাইল্যান্ডের সাদা চালের মূল্য টনপ্রতি ২০-৩০ ডলার বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও অনেক ক্রেতাই দেশটি থেকে চাল আমদানির জন্য দাম পরিশোধে প্রস্তুত রয়েছে। পূর্বে আমদানীকৃত চালের গুণগত মান সন্তোষজনক হওয়ায় এবং রফাতানিকারক কর্তৃক মান নিশ্চিত করার ফলে এ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিম আফ্রিকান অনেক দেশের পাশাপাশি ইরাক ও ইরান থাই বাজারে ঝুঁকেছে চাল আমদানির জন্য। চলতি বছর ইরাকে আমদানীকৃত থাই চালের পরিমাণ ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৮৫ টন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে থাইল্যান্ড থেকে ৬০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি করেছে ইরান। পাশাপাশি জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাইল্যান্ড থেকে চীনের আমদানীকৃত চালের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টন।
