সফল হয়েও মিলিয়ন ডলারের লোকসানে ‘নো টাইম টু ডাই’

ফিচার ডেস্ক

নো টাইম টু ডাই সিনেমার দৃশ্যে ড্যানিয়েল ক্রেগ

জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির এবারের সিনেমা নো টাইম টু ডাই এরই মধ্যে ৭৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘরে তুলেছে। সে হিসাবে বছরের পাশাপাশি কভিড-পরবর্তী সময়েও নো টাইম টু ডাই সর্বাধিক আয়কারী হলিউড সিনেমা। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বারবার পেছানোর পর অবশেষে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মুক্তি পায় সিনেমাটি। ড্যানিয়েল ক্রেগ, রামি মালেক, লাশানা লিঞ্চ অভিনীত সিনেমাটি দর্শকরা পছন্দ করছেন এবং অনেকে দ্বিতীয়বারও থিয়েটারে আসছেন। সাম্প্রতিক অন্যান্য সিনেমার তুলনায় প্রতিক্রিয়া আয় সন্তোষজনক। কিন্তু বক্স অফিস বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্ডের সিনেমার আয় আরো বেশি হওয়ার কথা। সে হিসাবে ভালো আয় করা সত্ত্বেও সিনেমাটি লোকসানের সম্মুখীন।

জোজি ফুকুনাগা পরিচালিত নো টাইম টু ডাইয়ের নির্মাণে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সিনেমার প্রচারে খরচ হয়েছে আরো প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। কভিডে মুক্তি পেছানো অন্যান্য বিলম্বের কারণে আরো মাশুল গুনতে হয়েছে। সিনেমা-সংশ্লিষ্টরা বলেন, খরচ বাদ দিয়ে সন্তোষজনক মুনাফার জন্য এর আয় ৯০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়ানো দরকার। বক্স অফিস বিশ্লেষকদের মতে, চলমান বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন। হিসাবে সিনেমাটি এখন ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে। মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার অবশ্য বলেছে, সিনেমাটি কেবল এর নির্মাণ খরচই তোলেনি, বরং প্রচুর মুনাফাও ঘরে তুলবে।

সিনেমাটির আয় মুনাফা লাভের সম্ভাবনা সম্পর্কে এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্র বলেন, বেনামি উৎস থেকে দেয়া বিশ্লেষণের কোনো সত্যতা নেই। থিয়েটার থেকে আমাদের প্রত্যাশিত আয় এরই মধ্যেই উঠে এসেছে। তাদের হিসাব অনুসারে, নো টাইম টু ডাই আন্তর্জাতিক বাজারে মহামারীর সময়ে সর্বাধিক আয়কারী সিনেমা। মহামারীর সময়ে যখন সব ধরনের সিনেমাই থিয়েটারে মার খাচ্ছে, সে সময়ে এটি নিজের মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার উভয়ের জন্য মুনাফা আনছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি যদিও নো টাইম টু ডাইয়ের আয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে না, বন্ডের বাজেট অন্যান্য খরচের কথা তুলে বলা হচ্ছে সিনেমাটির আরো বেশি আয়ের সম্ভাবনা ছিল।

সময়ে এসে বড় বাজেটের সিনেমাগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়েছে। মহামারীর সময়ের এটিই কঠিন বাস্তবতা। থিয়েটার যখন নিজেই মুনাফা তুলতে পারছে না, সে সময় সিনেমার পক্ষে বড় ব্যবসা করা কঠিন। মার্ভেলের শ্যাং চি অ্যান্ড দ্য লেজেন্ড অব দ্য টেন রিংস এটার্নালস, সুইসাইড স্কোয়াড, এমনকি ক্রিস্টোফার নোলানের টেনেট পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রিডলি স্কটের ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা দ্য লাস্ট ডুয়াল এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হতাশার নাম। ১০০ মিলিয়নের বেশি খরচে নির্মিত সিনেমাটি সারা বিশ্বে মাত্র ২৭ দশমিক মিলিয়ন ডলার আয় করে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বলা হয়, সুপারহিরো কিংবা স্পাই থ্রিলার বাদ দিয়ে কোনো ধরনের সিনেমা থিয়েটারে চলছে না। সমালোচকদের প্রচুর প্রশংসা পাওয়া অস্কারপ্রত্যাশী স্পেন্সার, বেলফাস্ট কিং রিচার্ডও থিয়েটারে দর্শক টানতে পারেনি।

অবশ্য ধীরে ধীরে অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে গেছে। ডুন নো টাইম টু ডাই দর্শক টেনে বক্স অফিস চাঙ্গা করে তুলেছে। সমালোচকরা মনে করছেন, কভিড-পরবর্তী সময়ে বড় বাজেটের সিনেমার জন্য খরচ তুলে ব্যবসা করা কঠিন। জটিলতা আরো বাড়ছে। কেননা ডিজনি, কমক্যাস্ট, ভায়াকম সিবিএস ওয়ার্নার মিডিয়া নিজস্ব স্ট্রিমিং সার্ভিস নিয়ে আসছে। নেটফ্লিক্স অন্যান্য স্ট্রিমিং সার্ভিসের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে কেবল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করার কারণে এদের কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। একটা সময়ে সিনেমা যেখানে কেবল থিয়েটারে টিকিট বিক্রির মাধ্যমেই ব্যবসা করত, এখন সেখানে ব্যবসার মাধ্যম বদলে গেছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমার জন্য মুনাফা তোলা প্রায় অবাস্তব একটা ব্যাপার হয়ে উঠেছে। মেট্রোর নো টাইম টু ডাই, সনির ভেনম: লেট দেয়ার বি কার্নেজ এবং শ্যাং চি মুক্তি না পেলে হলিউডের থিয়েটার সিনেমা-শূন্য অবস্থায় পড়ত। মুনাফা তৈরি করার ক্ষেত্রে থিয়েটারই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। অবস্থার উন্নতি না ঘটলে, অর্থাৎ থিয়েটারে দর্শক আগমন না বাড়লে ব্যবসা বাড়ানো সম্ভব হবে না।

ড্যানিয়েল ক্রেগ পর্যন্ত বন্ড সিরিজের যে সিনেমাগুলোয় অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে ক্যাসিনো রয়্যাল (২০০৬) ৬১৬ মিলিয়ন, কোয়ান্টাম অব সোলেস (২০০৮) ৫৮৯ মিলিয়ন ডলার আয় করে। স্কাইফল অবশ্য দশমিক বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল কিন্তু ৮৮০ মিলিয়ন ডলার আয়কারী স্পেকটারের অভ্যন্তরীণ আয় ছিল সবচেয়ে কম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা করে সিনেমাটি তা পুষিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখেই এবার মুক্তির ৩১ দিন পর ভিডিও অন ডিমান্ড প্লাটফর্মে আসছে নো টাইম টু ডাই। থিয়েটারে মুক্তির ক্ষেত্রে স্টুডিওগুলো থিয়েটারের সঙ্গে মুনাফা ভাগ করে নেয়। স্ট্রিমিং সাইটের ক্ষেত্রে মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ রাখতে পারছে। কভিডের আগে মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ারের হাতেই কেবল এর প্রযোজিত একেকটি সিনেমার স্বত্ব থাকত। কিন্তু এখন তা অ্যামাজনের হাতেও চলে যাচ্ছে। কভিড অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। তবে ভিডিও অন ডিমান্ড প্লাটফর্মে নো টাইম টু ডাই মুক্তির সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা স্বল্পসংখ্যক থিয়েটারে মুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্লাটফর্ম থেকে সিনেমাটি মুনাফা পুষিয়ে নিতে পারবে।

 

সূত্র: ভ্যারাইটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন