জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র

বীজ সংকটে বিপাকে রাঙ্গামাটির চাষীরা

প্রান্ত রনি, রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটিতে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে চলছে রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র নামে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাশরুম বীজ উৎপাদন কেন্দ্র। পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে চলছে স্পন (বীজ) তৈরির কার্যক্রম। কেন্দ্রটির বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিই প্রায় অকেজো। সক্ষমতার অনেক কম স্পন উৎপাদন করে কোনোভাবে টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ মাশরুম বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের বীজের ওপর নির্ভর করেই ব্যবসা পরিচালনা করেন স্থানীয় চাষীরা। কিন্তু সময়মতো পর্যাপ্ত বীজ না পাওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে প্রকল্পটি পুনরায় চালু হলে সংকট কমবে বলে আশাবাদ কর্তৃপক্ষের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের অধীনে মাশরুম চাষ জনপ্রিয় স্থানীয়দের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে রাঙ্গামাটি জেলা শহরের আসামবস্তি এলাকায় প্রায় দেড় একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র নামের বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি। এখান থেকে উৎপাদিত বীজ ক্রয় করে চাষীরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাশরুম চাষ করে থাকেন। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ২০১৮ সালে লাখ টাকার রিভলভিং ফান্ডের মাধ্যমে বীজ উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০০৯ সালে মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্রটি শুরু হওয়ার পর এখানে দৈনিক দুই হাজার পিস বীজ উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ১৫০-২০০ বীজ। ফলে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয় চাষীদের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষীরাও।

মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্রটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্পন তৈরির কারখানার সিলিং ভেঙে পড়েছে। ল্যাব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি বিভিন্ন আসবাব। ভেঙে পড়া সিলিংয়ের একপাশে স্পন তৈরির কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে অফিস, আবাসিক ভবন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। স্থানীয়রা জানায়, রাত হলে উৎপাদন কেন্দ্রটি হয়ে ওঠে স্থানীয় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল।

উৎপাদন কেন্দ্রে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন, শুরুর দিকে চাহিদা অনুযায়ী দিনে তিন-চার হাজার বীজ উৎপাদন করেছি আমরা। কিন্তু এখন ১৫০-২০০ বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। স্থানীয় চাষীদের চাহিদা থাকলেও আমরা পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ করতে সক্ষম নই।

মাশরুমচাষী কল্পনা চাকমা জানান, আমরা পর্যাপ্ত বীজ পাচ্ছি না। আবার বীজ পেলেও সময়মতো পাচ্ছি না। যে কারণে সঠিকভাবে উৎপাদনেও যেতে পারছি না। তাই বাজারে মাশরুমের চাহিদা থাকলেও বীজ সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের অনেক মাশরুমচাষী বীজ না পাওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকে বেকার জীবনযাপন করছেন।

মাশরুম বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পটি শেষ হলেও কোনোমতে পুরনো যন্ত্রপাতির সাহায্যে জোড়াতালি দিয়ে আমরা সীমিত আকারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। চাষীদের প্রচুর মাশরুম বীজের চাহিদা রয়েছে, কিন্তু আমরা আর্থিক সংকটের কারণে পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছি না। এখন রিভলভিং ফান্ডের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছি। যদি প্রকল্প পুনরায় চালু হয় তবে সংকট কাটবে।

তবে আশার কথা জানিয়ে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সম্প্রসারণ রাঙ্গামাটি উপকেন্দ্রের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. মেজবাহ উদ্দিন বণিক বার্তাকে জানান, বর্তমানে মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ২০০ বীজ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে কৃষকের কাছে বীজের চাহিদা অনেক বেশি। এরই মধ্যে আমি একটি প্রাক্কলন তৈরি করেছি। সেটি সাভারের কেন্দ্রীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যদি প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে, তাহলে আমরা মাশরুমচাষীদের আবারো কাঙ্ক্ষিত বীজ সরবরাহ করতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন